‘আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য। আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়। একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুল পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।’ ‘পাহাড় চূড়ায়’ কবিতায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এভাবে বলেন। যেন তাঁর কবিতার পঙক্তি উঠে এসেছে লাল-পাহাড়ের মেঘের উপত্যকা সাজেক ভ্যালির কথা। চারদিকে সমুদ্রের টেউয়ের মতো বির্স্তীণ পাহাড়ের সারি। তুলোর মতো উড়ে যাওয়া মেঘ আর এর মাঝেই যেন মাথা উঁচু করে ঠাঁই নিয়ে ‘সাজেক ভ্যালি’।
শারদীয় দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদে মিলাদুন্নবীরসহ টানা ছুটিতে পর্যটকমুখর হয়ে উঠেছে মেঘের উপত্যকা রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালিতে। শহুরে জীবনের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে মেঘের উপত্যকা সাজেক ভ্যালি ও হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙ্গামাটিতে ছুটে এসেছেন হাজারও পর্যটক। ইতোমধ্যে বুকিং রয়েছে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলের রুম।
কটেজ রির্সোট ছাড়াও কমিউনিটি ব্যাচে (সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে) থাকছেন পর্যটকরা। ছুটি পেলেই পর্যটকরা রাঙ্গামাটি জেলায় ছুটে আসেন মেঘ পাহাড় আর লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগে। যার ব্যক্তিক্রম হয়নি এবারও।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতার নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি যেন অপার সৌন্দর্য্যের আধার। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বহুল আলোচিত বাঘাইছড়ি উপজেলার আয়তনে সবচেয়ে বড় ইউনিয়নও সাজেক ইউনিয়ন। ৬৮৪ বর্গ কিলোমিটারের সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই থেকে কংলাক পাহাড়- দুটো পাহাড় ঘিরেই মেঘের উপত্যকা সাজেক ভ্যালি।
২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নয়নাভিরাম সাজেক ভ্যালিতে পর্যটন রিজোর্ট গড়ে তোলা হয়। তারপর থেকেই দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি পেয়েছে সাজেকের রুইলুইপাড়া। তবে ক্রমান্বয়ে সাজেকের সৌন্দের্যের প্রবাহে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কংলাক পাহাড়ে এখন গড়ে উঠেছে নানা রিসোর্ট-কটেজ।
টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বরণে পূর্ব থেকেই প্রস্তত ছিলো সাজেক ও রাঙ্গামাটি শহরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
মেঘের রাজ্যখ্যাত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে রিসোর্ট-কটেজে প্রচুর পর্যটকের চাপ রয়েছে। এতে রুম বুকিং পেতে বেগ পেতে হচ্ছে পর্যটকদের। কোন কোন কটেজে রুমও খালি নেই।
মেঘপুঞ্জি রিসোর্টের ম্যানেজার পুষ্প চাকমা জানান, আমাদের রিসোর্টের রুমগুলো অনেক আগে থেকেই নভেম্বর মাস পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। অনেক পর্যটক আসছেন এবং বুকিং এর জন্য ফোন দিচ্ছেন কিন্তু আমরা কটেজ খালি না থাকায় বুকিং নিতে পারছি না।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জানান, সেন্টমার্টিনে যে পরিমাণ পর্যটক যায় এবার সে পরিমাণে পর্যটক যেতে না পারার কারণে টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের চাপ রয়েছে। তবে রুমের অভাবে কোনো পর্যটককে রাস্তায় কিংবা রির্সোটের বারান্দায় ঘুমাতে হয়েছে সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কারণ যেসব পর্যটক রুম পায়নি তাদের কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কমিউনিটি ব্যাচ (সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে) আগে যেমন পর্যটক আসলে থাকত সেভাবে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মেঘের রাজ্য সাজেকে পর্যটক দিন দিন বাড়ায় আরও পরিকল্পনা অনুসারে কটেজ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন মালিক সমিতির এই নেতা।
ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকা রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি নামে পরিচিত এই উপত্যকাটি ২০১৪-১৫ সালের পর থেকেই মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বছরের ১২ মাসই সাজেকে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে; তবে ভ্রমণপ্রেমী মানুষের বাড়তি চাপ থাকে ছুটির দিন ও শীতকালে।
সাজেক উপত্যকায় মেঘের টেউ খেলানো কিংবা উড়ে যাওয়ার দৃশ্য বরাবরের মতোই প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানে। তাই সারাবছর সাজেক উপত্যকায় পর্যটকদের ভীড় থাকে।
সাজেকের কটেজ মালিকরা জানান, টানা ছুটির কারণে আমাদের হোটেলের প্রায় শতভাগ রুম বুকিং বলা যায়। আগামী রোববার পর্যন্ত আমাদের হোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই।