ভোলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল ও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সহস্রাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিন দিনেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় অনেক শিশুকে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা মাত্র ১৫। ভোলাসদর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগী আসায় প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা অর্ধ-শতাধিক। বাধ্য হয়ে রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোববার (১৬ অক্টোবর) ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় ডায়রিয়া রোগীর জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসাকরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার ফরহাদ হোসেন জানান, তার এক বছর বয়সি শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে কোনো উন্নতি না হওয়ায় ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। এখানে এসে দেখেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো সিট খালি নেই। তাই শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই অবস্থা তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে আগত নুসরাত বেগমের। তার শিশুকন্যাকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। এখানে এসে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো সিট না পেয়ে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ইয়ানুর বেগম জানান, তার বৃদ্ধা শাশুড়ি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে কোনো উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করান। সিট খালি নেই। তাই হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার একটি বেডে দুই-তিনটি শিশু রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে ভোলা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৫৭টি শিশু।
ডায়রিয়ার পাশাপাশি শিশুদের হঠাৎ করেই নিউমোনিয়া বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভোলায় ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৫টি। বর্তমানে এখানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী। যাদের বেশির ভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেকেই গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ভোলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবদুল মজিদ শাকিল জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ও পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় ভোলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ স্যালাইনসহ ওষুধ রয়েছে।
তিনি জানান, হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন তিনশত থেকে সাড়ে তিনশত রোগী আসে। এর মধ্যে এক থেকে দেড় শত জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে অবস্থা খারাপ রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. লোকমান হাকিম জানান, ভোলায় হঠাৎ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় ও ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।