শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এই শীতে ভিন্ন অভিজ্ঞতা পেতে ঘুরে আসুন কক্সবাজার

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩১

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নাম কী, এ বিষয়ে প্রশ্ন করার আগেই নিশ্চয়ই আপনি উত্তর দিতে প্রস্তুত। যদি উত্তর হয় 'পালংকি', তবে নিশ্চয়ই আপনার ভ্রু কুচকে উঠবে। খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এ কথাটি মিথ্যা নয়। কারণ, কক্সবাজারের প্রাচীন নামই ‘পালংকি'।

একসময় এটি 'প্যানোয়া' নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘হলুদ ফুল'। অতীতে কক্সবাজারের আশপাশের এলাকা ছিল হলুদ ফুলের সমারোহে ভরপুর। ব্রিটিশ আমলে সমুদ্র ও জঙ্গলে ঘেরা পালংকিতে আশ্রিত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। ক্যাপ্টেন কক্স পালংকি এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন, যা কক্স সাহেবের বাজার নামে পরিচিতি পায়। পরে সেখান থেকেই 'কক্সবাজার' নামের উৎপত্তি। হারিয়ে যায় আদি নাম পালংকি।

বছরের বিভিন্নসময়ে ছুটি পেলেই হাজারো মানুষ ছুটে যান কক্সবাজারে। ঘুরে আসেন সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন এলাকা; কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সমুদ্রের পাশের হোটেল আর বার্মিজ মার্কেট। তবে চিরাচরিত এই কক্সবাজারের রয়েছে ভিন্ন রূপ, যা অনেকেরই অজানা থেকে যায়। কারণ, রাজধানী বা দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে যারা এই শহরে বেড়াতে যান, মূলত সড়ক বা আকাশপথেই ভ্রমণের পর ঠাঁই নেন হোটেলে। হোটেলে থেকে ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে যখন সমুদ্রের পাশে সারাদিন থেকে উপভোগ করা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় শোনা যাবে ঢেউয়ের কলতান।

লোকালয় থেকে খানিকটা দূরেই ক্যাম্পসাইটে পড হাউজ বা তাঁবুতে থেকে সৈকত উপভোগ করা যাবে, সঙ্গে থাকবে রাতের আকাশের তারা। খুব কাছে থেকে ভিন্ন এক সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ মিলবে।

এখন কক্সবাজারের হিমছড়িতে আছে ক্যাম্পিংয়ের সুব্যবস্থা। এছাড়া যাদের সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে গভীর আগ্রহ, তাদের জন্য কক্সবাজার শহরে গড়ে উঠেছে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড। ফিশ ওয়ার্ল্ডে থাকছে সাগরের তলে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা। সেখানে দেখা যাবে দেশি–বিদেশি প্রায় ২০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী। পরিবারের সবাই মিলে, বিশেষ করে শিশুদের আনন্দের জন্য রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের জুড়ি নেই।

যাঁরা ইতিহাস ভালোবাসেন কিংবা ঐতিহাসিক স্থাপনার পুরনো গল্পে হারিয়ে যান,  তাঁদের জন্য কক্সবাজারে আছে রামুর কয়েক শ বছরের পুরোনো বৌদ্ধমন্দির। রামুর প্রায় ৩৫টি বৌদ্ধমন্দিরে গেলে দেখা যাবে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মের গোড়াপত্তনের সময়কার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। এছাড়া, মিঠাছড়ার পাহাড়ে গিয়ে থমকে যেতে হয় গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সোনালী শায়িত মূর্তির সামনে। বলা হয়ে থাকে, এটা এশিয়ার সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দির।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে এসি ও নন-এসি বিভিন্ন বাসে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। টিকিটের দাম নন-এসি বাসে জনপ্রতি ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা, এসি বাসে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা হতে পারে। এছাড়া বিমানে গেলে জনপ্রতি ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজারের মধ্যে।কক্সবাজার শহর থেকে হিমছড়িতে যাবার জনপ্রিয় বাহন 'চাঁদের গাড়ি', এছাড়াও সিএনজি ও অটোরিকশাযোগে যেতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আসাযাওয়া মিলিয়ে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। সাধারণ খাবারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে মানসম্পন্ন খাবার খাওয়া যাবে। সি-ফুডের ক্ষেত্রে দাম বেশি পড়বে। তবে স্থানভেদে এই দাম কমবেশি হতে পারে।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন