কুয়াশামাখা ভোরে আড়মোড়া ভাঙলো কাপ্তাইয়ের পাখির কিচিরমিচিরে। পড়শি পাহাড়ে আটকে আছে মেঘের মিছিল। হঠাৎ-ই লেকের জলে সোনালি আভা, বুঝতে বাকি নেই কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঠছে সূর্য। লেকের নীল পানি আর আকাশের সোনালি বর্ণের সন্ধিক্ষণের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে কেবল, লেখা যাবে না!
এমন দৃশ্য উপভোগ করতে ঘুম থেকে উঠে কোথাও যেতে হয়নি, উঠে বসতেও হয়! বিছানায় শুয়ে আয়েশিভাবে কাপ্তাইয়ের অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগের সব ব্যবস্থাই করেছে ‘মায়ালীন-ভাসমান ভিলা’। এটি একটি অসাধারণ ভাসমান বিস্ময়, যার পুরোটাই স্বচ্ছ কাচে ঘেরা। এর ফলে চারপাশের দৃশ্য দেখতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নেই কোনো সৌন্দর্য অধরা থাকার আফসোস।
আরেকটু বেলা হলে, কোমল সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করছিল। গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরবে আন্দোলিত পুরো ভিলা। কী স্নিগ্ধময় শীতের সকাল! রুমের গ্লাসটা সরিয়ে যখন এক কাপ চা হাতে বের হলাম, তখনই গা শিউরে ওঠা বাতাস! এমন সকাল আর কখনো আসবে? হ্যাঁ কিংবা না-দুটোই হতে পারে!
শুধু সকালই নয়, মায়ালীনের প্রতিটা মুহূর্ত ছিল মায়ায় ভরপুর। রাতে হাজারো তারার মেলায় নিজেকে আবিষ্কার করা কিংবা বুড়ো বিকেলে লেকে চষে বেড়িয়ে সেখানকার জীবনযাপন অবলোকন। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য আর মাথার ওপর নানা জাতের পাখিদের ওড়াউড়ি, কী মনোরম! মধ্যিখানে দুপুর বেলায় বেনামী পাহাড়ে ভিড়লো মায়ালীন। এই সুযোগে আমরাও সেরে নিলাম স্বচ্ছ জলে স্নান। স্নান শেষে মিঠে রোদের সঙ্গে যে আলাপন, তাও স্মৃতির ঝুলিতে গেঁথে রাখার মতোই।
মায়ালীন কেন আলাদা
কাপ্তাইয়ে বেশকিছু হাউজ বোট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা থাকলেও, দৃশ্যত তা নৌকাই। কিন্তু মায়ালীন যেন ভাসমান কোনো রিসোর্ট। সাদা রঙের ভাসমান এই ভিলা যেকোনো আবহাওয়ায় সবার নজর কাড়তে বাধ্য।
দুটি বাঙ্ক বেডসহ বিলাসবহুলভাবে সজ্জিত চারটি বিলাসবহুল এসি রুম রয়েছে মায়ালীনে। প্রতিটি রুম স্বচ্ছ কাচ ও সাদা পর্দা দিয়ে ঘেরা। বিছানার চাদর থেকে দেয়াল এবং ছাদ পর্যন্ত বিভিন্ন সাদা শেডে সজ্জিত। আছে মুগ্ধকর নানা শৈল্পিক ফিচার। একটি জ্যাকুজির ব্যবস্থাও আছে, যাতে স্নানের সময়ে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন।
ভিলার ওপরের অংশে রয়েছে একটি লাউঞ্জ। এতে দুর্দান্ত কিছু চেয়ার রয়েছে, যাতে খুব আরাম করে জুস কিংবা কফি পান করতে পারেন। চাইলে বড়শিতে মাছও শিকার করতে পারেন। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেলিস্কোপের সাহায্যে দেখতে পারে মহাজাগতিক রূপ। আর খাবার নিয়ে আপনার কোনো চিন্তাই নেই; সময়মতো আপনাকে পরিবেশন করা হবে স্থানীয় সব সুস্বাদু পদ।
কেন এমন উদ্যোগ
মায়ালীনের অতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে, এর নেপথ্যের গল্প শোনার বেশ ইচ্ছে জাগলো। কাপ্তাইয়ের জলে ভাসমান এই ভিলার সব উদ্যোক্তাই থাকেন ঢাকায়। মায়ালীন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ রাতুলের সঙ্গে চায়ের কাপে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হলো সেই আলাপ। তিনি ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন ডিরেক্টর রয়েছেন; ফারহান আল রাফী, নাভিদ নওরোজ শাহ, এমআই মুরাদ।
ইনাম আহমেদ রাতুল বলেন, ‘২০১৯ সালে একটি টং দোকানে চা খেতে খেতেই আমাদের মাথায় এই আইডিয়াটা আসে। আমরা চেয়েছিলাম যে, পর্যটকরা যেন বিছানায় শুয়ে কাপ্তাইয়ের দৃশ্য ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উপভোগ করতে পারেন। অবশেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করা সম্ভব হয়।’
তিনি বলেন, ‘মায়ালীন ভ্রমণ করে এখন পর্যন্ত সবাই সন্তুষ্ট, যেটা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। আমরা রাঙামাটি নিয়ে আরো দুর্দান্তভাবে ভাবতে চাই। একটা বিষয় বলে রাখি, মায়ালীনে প্রতিটা রিজার্ভেশনে আমরা একটি করে গাছ রোপণ করি।
রাঙামাটির আসামবস্তি বাজার থেকে শুরু হয় দুই দিন এক-রাতের মায়ালীন ভাসমান ভিলা ভ্রমণ। পুরো ট্রিপে কাপ্তাই লেকের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার চষে বেড়ায় এই ভিলা। পুরো ভিলা রিজার্ভ করতে খরচ হতে পারে ৫৫০০০ থেকে ৭৫০০০ টাকা। তাছাড়া ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ করে সময় সাপেক্ষে রুমও ভাড়া নিতে পারেন।