শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছয় বছর ধরে বন্ধ

এবারও থার্টিফাস্ট উদযাপনের জমকালো আয়োজন নেই কক্সবাজারে

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪৮

আর কয়েক ঘণ্টা পর পৃথিবীর হালখাতা থেকে স্মৃতি হবে ২০২২ সাল। ৩৬৫ দিনের সফলতা ও ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ২০২৩ সালকে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টিফাস্ট নাইট। 

দেড় দশক থেকে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে উঠে। তবে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে দেড় দশক ধরে চলা এমন চিত্র ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তবুও থার্টিফাস্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্থ দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক সমাগম হবে এমন প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির। 

টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ এম এ হাসিব বাদল বলেন, নব্বই দশকের শেষ থেকে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে বেসরকারি টেলিভিশন কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বর্ষবরণ জমিয়েছে। তারকা হোটেলগুলো ইনডোর অনুষ্ঠান আয়োজন করতো। যেখানে বহিরাগতরাও অংশ নিতে পারত। কিন্তু ২০১৭ সালে একসঙ্গে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা আগমণ ঘটে। এরপর বাংলাদেশে পূর্ব থেকে অবস্থান করা আর তিন লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে অবস্থান হচ্ছে। সেই থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ২০১৭ সাল হতে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে সৈকত তীরে উন্মুক্ত বা বাউন্ডারি ভুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর মহামারি করোনা পর ২০১৯ সাল থেকে পুরো পর্যটন নগরীই বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে থার্টিফার্স্ট নাইটের জমজমাট আয়োজন আর হচ্ছে না কক্সবাজারে।

ছাব: ইত্তেফাক  

ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, থার্টিফার্স্টে উন্মুক্ত কোন আয়োজন নেই। তবে, তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও রয়েল টিউলিপ সি পার্লসহ কয়েকটি হোটেল ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কিন্তু এবারও বাইরের কোনো অতিথির প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাই এবারের থার্টিফাস্ট নাইট বা নতুন বর্ষ বরণকেও ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করছেন পর্যটকরা।  

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও বিচে ওপেন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত ২টা পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত ১০টার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শহরের অভ্যন্তরে যানজট কমাতেও।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা জানান, থার্টিফাস্ট নাইট উৎসবের আগেই বড়দিন ও শীতকালীন ছুটি উপলক্ষ্যে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। একই সঙ্গে পর্যটকরা ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে ভিড় জামাচ্ছেন। তবে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এবার আগের চেয়ে পর্যটক সমাগম কম হবে।অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করতো, যা এবছর ভাটা পড়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মৌসুমের এ সময়টা পর্যটকরা কক্সবাজারকেই প্রাধান্য দেয়। আর কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ৭৫ শতাংশ সেন্টমার্টিন ট্যুরে যান। এ বছর এ সুযোগ অবারিত নেই- তাই পর্যটক আগমণ কমেছে। এরপরও ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩-কে স্বাগত জানাতে কয়েক লাখ পর্যটকের মিলন মেলা হবে আশা করা যায়। ইতোমধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল সচল থাকলে পর্যটকের ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতো। কিন্তু এখন রোববারই শেষ হতে পারে পর্যটক সমাগম।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, বর্ষ বরণে আমরাই ইনডোর প্রোগ্রামগুলো চালু করে থার্টিফাস্ট নাইটকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটকদের চাহিদার কারণে এবারো বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাইরের গেস্টদের জন্য হোটেলের ছাদের রেস্তোরায় রসালো ম্যানোতে সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা হয়েছে ব্যুফে ডিনার। এখানে ওপেন কনসার্ট উপভোগ করে রাতের খাবার সারতে পারবেন অতিথিরা।

ফেনীর দাগনভূইয়া থেকে আসা পর্যটক আহমদ রায়হান দম্পতি বলেন, ভ্রমণকারী কমবেশি সবার ইচ্ছে, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে রাত ১২টা ১মিনিটে পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করার।

কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়টি মানবিক বিপর্যয়। এটি কক্সবাজারের সৌন্দর্য্যকে ম্লান করতে পারেনি। তাই থার্টিফাস্ট নাইটে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত হয়নি। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।

ছবি: ইত্তেফাক

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করতে পারবে না কেউ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সরকারি নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট, গান বাজনাসহ সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করতে পারে। সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে। পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র‌্যাব মাঠে থাকবে।

ইত্তেফাক/আরএজে