শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাক্ষাৎকারে ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক

‘অর্থ সংকলনের উপায় আয়োজনটিকে আরো টেকসই করবে’

ঢাকায় আবারও বসছে শিল্প-সাহিত্য আর চিন্তার আন্তর্জাতিক সম্মিলন। করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার আগামী ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর দশম আসর। এবারের আয়োজনে কী কী থাকছে, অতিথি হিসেবে কারা যুক্ত হবেন, লিট ফেস্ট আয়োজনের উদ্দেশ্য কী—এসব বিষয়ে ইত্তেফাকের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সাযআহসান আকবর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরাফত হোসেনসৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার

আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:৪২
  • ইত্তেফাক: বিরতির পর দশম আসর আয়োজন নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাই।

    সাদাফ সায: দুই বছর পর ফিরতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এবার একজন নোবেল বিজয়ী লেখক আবদুর রাজাক গুরনাহসহ বেশ কজন আইকনিক ফিগার যেমন—অমিতাভ ঘোষ বা নুরুদ্দিন ফারাহ আসছেন—এটা অনেক বড় ব্যাপার। একটা বিরতির পরও আমরা যে একটা বড় লাইনআপ নিয়ে আসতে পারছি, এটা সত্যি খুব আশাজাগানিয়া। আমরা আশা করি আমাদের পাঠক-শ্রোতারাও গভীর আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন।

  • ইত্তেফাক: এবারের আসরের অতিথি হিসেবে ওরহান পামুকের আসার কথা ছিল। বিশেষ কোনো চমক রয়েছে কি?

    আহসান আকবর: অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে ওরহান পামুক ব্যক্তিগত কারণে শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। তার পরও আমাদের খুবই চমৎকার একটা লাইনআপ আছে। নোবেল বিজয়ী একজন লেখক আসছেন, অন্য তারকারা আছেন। টিল্ডা সুইনটন আবারও আসছেন। গর্ডন গ্রিনিজ আসছেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের অন্যতম উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট আসছেন।

  • ইত্তেফাক: আমরা দেখেছি, বিগত আসরগুলোতে দর্শক বিনা মূল্যে লিট ফেস্টে প্রবেশ করতে পেরেছেন। এবার টিকিট চালু করা হলো। এর কারণ কী?

    কাজী আনিস আহমেদ: দেখেন, লিট ফেস্ট এত দিন করপোরেট স্পনসরশিপ এবং কিছুটা সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলেছে। অনেকে কিন্তু এই নির্ভরতার সমালোচনা করেছেন। আমরা মনে করি, কোনো এক ধরনের উেসর বদলে একাধিক সমানুপাতিক অর্থ সংকলনের উপায় আয়োজনটিকে আরো টেকসই করবে। এছাড়া একটা আদর্শের ব্যাপারও আছে। পাঠক-শ্রোতারা টিকিট কাটার মধ্য দিয়ে লেখকদের সম্মানী প্রদানে সাহায্য করবেন। আমরা আশাবাদী যে লেখকদের এই সম্মান দেখাতে পারার বিষয়টি অধিকাংশ সাহিত্যানুরাগীই ইতিবাচকভাবে দেখবেন। এটাই আন্তর্জাতিক রীতি। বিশ্বের প্রায় সব বড় ফেস্টিভ্যালেই টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। আমরা মনে করি, আমাদের পাঠক-শ্রোতারা সেই মানদণ্ডে চলতে প্রস্তুত।

  • ইত্তেফাক: বিগত আসরে সরকারি অনুদান ছিল। এবার নেই কেন?

    সাদাফ সায: পরপর কয়েক বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আমাদের অর্থসহায়তা দিয়ে এসেছে। এবার সরকারের ব্যয় সংকোচনের কারণে তাদের কাছে পর্যাপ্ত ফান্ড ছিল না। তারপর মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আমাদের অনুদানের আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠিয়েছেন এবং চেষ্টা করছেন।

  • ইত্তেফাক: সুনির্দিষ্টভাবে বললে ঢাকা লিট ফেস্ট আয়োজনে কেমন খরচ হয়? ব্যক্তিগতভাবে এতে আপনাদের অর্থায়ন কত ভাগ?

    কাজী আনিস আহমেদ: খরচ প্রায় কয়েক কোটি। গত এক দশকে আমরা তিন পরিচালক এখানে বিপুল অঙ্ক বিনিয়োগ করেছি। এটা ছাড়া সম্ভব ছিল না।

ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায ও আহসান আকবর

  • ইত্তেফাক: এত খরচ, এত ঝক্কি। কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায ও আহসান আকবরের এই শ্রমের পেছনে শিল্প-সাহিত্যের প্রতি অনুরাগই কি মূল প্রেরণা? নাকি শুধু প্রচলন ধরে রাখার চেষ্টা?

    আহসান আকবর: পুরোপুরি শিল্প-সাহিত্যকে ভালোবাসি বলে আর বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে স্বমহিমায় তুলে ধরতে চাই।

  • ইত্তেফাক: লিট ফেস্ট আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে আপনারা তিনজন এক হয়েছিলেন কীভাবে?

    সাদাফ সায: ২০১১ সালে প্রথমবার যখন হে ফেস্টিভ্যালের পরীক্ষামূলক একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, তখন আমরা তিনজন একেক জন একেকভাবে যুক্ত ছিলাম। সেখান থেকেই পরিচয়, একত্রে কাজ করা ও বন্ধুত্ব। এবং ২০১৫ থেকে ঢাকা লিট ফেস্ট নামে আত্মপ্রকাশ।

  • ইত্তেফাক: লিট ফেস্টে দেশি-বিদেশি বহু কবি-সাহিত্যিকের সমাগম ঘটে। আমরা বিভিন্ন পেশাজীবীর সম্মেলন দেখি যেমন—স্থপতি, প্রকৌশলী, চিকিৎসক বা বিজ্ঞানীদের সম্মিলন। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য নিয়ে যারা ডুবে থাকেন, তাদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজন করা সাহসের বিষয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আপনারা সামলান কীভাবে?

    আহসান আকবর: আমাদের গোড়া থেকে একটা বিশ্বাস ছিল, বাংলাদেশের পাঠক-শ্রোতারা বিশ্বের সেরা লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদদের কথা শুনতে চাইবেন। আমরা কখনোই আমাদের দর্শকদের আন্ডার এস্টিমেট করিনি। সেরাদের সেরা যারা, তাদের আনতে চেষ্টা করেছি। দর্শকদের উত্তরোত্তর জোরালো সাপোর্ট এই কম্বিনেশন এবং কিছু করপোরেটের উদার সহায়তা আমাদের এত দূর নিয়ে এসেছে।

  • ইত্তেফাক: বিগত বছরগুলোতে কোনো প্রবেশ ফি না থাকায় সব শ্রেণির মানুষই বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে মেলবন্ধনের সুযোগ পেয়েছে। টিকিট চালুর ফলে লিট ফেস্ট কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা সচ্ছল গোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে বলে মনে করেন কি?

    কাজী আনিস আহমেদ: এরকম ধারণা আমরা অমূলক বলে মনে করি। দিনপ্রতি একজন শিক্ষার্থী মাত্র ২০০ টাকা বা একজন কর্মজীবী ব্যক্তি মাত্র ৫০০ টাকা দিতে পারবেন না, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়।

  • ইত্তেফাক: মানুষ এই আয়োজনটিতে বিনা মূল্যে প্রবেশ করায় অভ্যস্ত। কী মনে করেন, এবার মানুষের সাড়া পাবেন কতটা?

    আহসান আকবর: আমরা মনে করি, সত্যিকারের শিল্প-সাহিত্যের অনুসারীরা ঠিকই আসবেন। প্রতিটি সেশনে হল গতবারের মতোই ভরা থাকবে।

  • ইত্তেফাক: অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা নিয়ে আপনাদের নির্দিষ্ট কোনো টার্গেট বা লক্ষ্যমাত্রা আছে কি না?

    সাদাফ সায: গত কয়েক বছরে আমরা তিন দিনে মোটমাট ২৫ থেকে ৩০ হাজার দর্শক পেয়ে এসেছি। এবারও সে রকমই হবে বলে মনে করি।

  • ইত্তেফাক: বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বিগত বছরগুলোতে যে অঙ্কের ভাড়া রেখেছে, এবারের ভাড়ার পরিমাণ তার সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ?

    কাজী আনিস আহমেদ: অতীতে তারা কয়েক বার ফ্রিতে বা নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দিয়েছেন। আবার দু-তিনবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদান থেকে একটা অঙ্ক কেটে নিয়েছেন। তবে এবার আমাদের কাছে যে সরাসরি ২১ লক্ষ টাকা ভাড়া চেয়েছেন তা একেবারে অনভিপ্রেত।

  • ইত্তেফাক: ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা আলাদা কোনো ভাবনা আছে কি?

    সাদাফ সায: এই অনুষ্ঠান এবং তার স্বাধীন প্রোগ্রাম ধরে রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার পাশাপাশি এটাকে আরো টেকসই ভীত দেওয়াটা এখন আমাদের একটা লক্ষ্য। লাইনআপে আরো উৎকর্ষ আনা অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। সর্বোপরি বৃহত্তর পাঠক ও দর্শকশ্রেণির সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। টিকিটিং সিস্টেম নিয়েই সেটা সম্ভব বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।

  • ইত্তেফাক: আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের এই মহতি উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন।

    কাজী আনিস: দৈনিক ইত্তেফাককেও স্বাগত।

আরও পড়ুন

ইত্তেফাক/ইআ/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন