বাঙালির কাছে ইতিহাস বরাবরই অপছন্দের। ইতিহাসের কাঠখোট্টা বিষয় আর আমাদের করুণ গল্প মিলেমিশে একাকার হয়ে হৃদয়ে ঘৃণার জন্ম দেয়। যেখানে ঘৃণার চাষ, সেখানে ভালোবাসার বাস। কঠিন জিনিসও সহজ হয়ে যায় বোঝানোর মুন্সিয়ানায়। গত আড়াই বছর ধরে সেই কাজটিই করে আসছে 'ইতিহাসের গল্প'- নামক প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক ও ইউটিউবে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষায় ও চিন্তায় বড় করার বাসনা নিয়ে এগিয়ে চলছে তারা।
২০২০ এর মাঝামাঝি যাত্রা শুরু করে ইতিহাসের গল্প। শুরুর সময়টাতে ফেসবুক পেজে ইতিহাসের নানান বিষয় ছবি আকারে প্রকাশ করতেন তারা। দর্শকের সাড়া পেলে সিদ্ধান্ত নেন বিস্তৃত আকারে আসবেন ভিডিও নিয়ে। 'সংক্ষিপ্ত, তবু নয় অপর্যাপ্ত' প্রতিপাদ্যে ২০২১ সাল থেকে শুরু হয় নিয়মিত আসা। ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখনও চলছে তাদের যাত্রা।
এখন অবধি ইতিহাসের গল্পের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওর সংখ্যা ৯৫টি। ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছবি। প্রতিটি ছবির গল্প আলাদা। একেকটি ছবি মানে একেকটি নতুন ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া। ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওগুলো সাড়া ফেলেছে জ্ঞানপিপাসু দর্শকের মনে। মানুষ আজকাল গল্প দেখতে পছন্দ করে।
ইতিহাসের গল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও রোর বাংলার ডেপুটি এডিটর ইন চিফ মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক মনে করেন, 'এখন সময়টা ভিডিওর। সবাই সারাদিন ভিডিও দেখে। আমরা চেয়েছি এর মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসকে সবার সামনে তুলে ধরতে। আমাদের দারুণ একটা দল আছে। গল্পে গল্পে সহজ ও সুন্দর করে মানুষকে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলেই আমাদের সার্থকতা।'
সহজ ও সুন্দরের পথেই এগিয়ে চলছে ইতিহাসের গল্প। ১৩ জনের একটি দল অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছে পর্দার আড়ালে। যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, গোয়েন্দাগিরি, খাবার-দাবারসহ নিরলস শ্রমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে প্রাচীন মিশর, সিন্ধু সভ্যতা, মেসোপোটেমিয়া, জার্মানির ইতিহাস থেকে শুরু করে কেজিবি, সিআইএসহ চেঙ্গিস খান, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কথা। তারা শেকড় ভুলে যায়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সবার কাছে। এছাড়াও, সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ইতিহাস জানাতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। ইতিহাসের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, চেনা বিষয়ের অচেনা দিক তুলে আনেন। যা দর্শকমহলে তাদের আলাদা বিশেষত্ব তৈরি করেছে।
এই প্ল্যাটফর্মটির আরেকজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আদনান আরিফ সালিম বলেন, 'একটি জাতির উন্নতির জন্য তার ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নেই। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা এতেই সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেই। ইতিহাসের মতো জীবন্ত এক বিষয়কেও এমন সাদামাটাভাবে এদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা হয় যে তারা এর মূল রস ও শিক্ষা আহরণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইতিহাসের গল্পের মাধ্যমে আমরা গল্পে গল্পে মানুষকে ইতিহাস শোনাতে চাই। যে ইতিহাসের কোনো সীমারেখা নেই।'