জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, আমরা যদি দেশপ্রেমিক হই, দেশকে ভালোবাসি তাহলে মানুষের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পক্ষে সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। নতুনদের শেখাতে হবে দেশ পরিচালনার জন্য, কাজের জন্য লেখাপড়া শেখার কোনো বিকল্প নেই। যতদিন শেখ হাসিনা আছেন ততদিন আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।
গতকাল বুধবার দুপুরে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক, কাউন্সিলর ও সহায়ক কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, যে পর্যন্ত আমরা এক থাকব সে পর্যন্ত আমাদের কেউ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। সব কাজের ভালো দিক, মন্দ দিক আছে। নেতাদের কাজ হলো সমন্বয় সাধন করা। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দেয় আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে তা যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সর্বত্র চেহারা বদলে যেত। পৌরসভার জন্য আসা অর্থ ও ট্যাক্সের সদ্ব্যবহার করতে হবে। ঠিকাদাররা সঠিকভাবে কাজ করলে সম্পদের সদ্ব্যবহার হয়। কিন্তু বড় ঠিকাদাররা নিজেরা কাজ না করে সাবকন্ট্রাক্ট দেন বলে কাজ নিম্নমানের হয়।
এক সময় ছিল সরকারি কাজ সঠিকভাবে হতো। এখন এই খাতে লুটপাট হয়। আমরা একত্রিতভাবে কাজ করলে কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সঠিকভাবে কাজ আদায় করা। কিন্তু তারা ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ করেন বলে কাজের মান খারাপ হয়। আমরা ৩৮ বছর ধরে বলে আসছি ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। নেতা যতই বড় হন না কেন ঐক্য না থাকলে সরকার সেখানে কাজ করতে চায় না। আমরা কখনো কাজের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। নেতিবাচক বা অনভিপ্রেত কাজের অপপ্রয়াস ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। এক না থাকলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, পৌরসভায় আইনকানুন-নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। সরকারি টাকা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে খরচ করতে হবে। মনে রাখতে হবে—ওপরে আল্লাহ, নিচে আইনকানুন; এটা অবশ্যই মানতে হবে। নাগরিকদের পৌরকর প্রদান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমরা বিগত তিন যুগ ধরে ভাণ্ডারিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরাই পিরোজপুরের বলেশ্বর সেতু, ঝালকাঠিতে গাবখান সেতু, বাগেরহাটের দরটানা সেতু, খুলনার রূপসা সেতু নির্মাণ করেছি। পিরোজপুরে বাইপাস সড়ক, সার্কিট হাউজ, ষোলশহর বিদ্যুৎ প্রকল্প—এসব উন্নয়ন আমাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। পিরোজপুরে এখন যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ সম্পন্নের পথে তা তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম ভাণ্ডারিয়ায় বসেই নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সে সময় ভাণ্ডারিয়ায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের সূচনা একই সময় ঘটেছিল। আমাদের সফলতা হচ্ছে এলাকায় ঐক্য সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রী কাজের লোক চান বলেই বিভিন্ন সময় আমাদের তার সঙ্গে রাখেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, পৃথিবীময় জটিল অবস্থা বিরাজ করছে। যুদ্ধ চলমান বলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। রপ্তানি কমে গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে আমাদের স্থানীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রশাসক ফায়জুর রশীদ খসরু জোমাদ্দার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, উপজেলা জেপির নির্বাহী সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা খান এনায়েত করিম, উপজেলা জেপির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আক্তার, টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রশীদ তারিক, গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী, ইকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই হাওলাদার, ভিটাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান খান এনামুল করিম পান্না, তেলিখালী ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দীন হাওলাদার, নদমূলা-শিয়ালকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন জোমাদ্দার আরিফসহ পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ।
এদিকে সন্ধ্যার পর তিনি উত্তর-পূর্ব ভাণ্ডারিয়ার মিয়া বাড়ী সংলগ্ন তালিকুম কুরআন নূরানী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ওয়ার্ড জাতীয় পার্টি-জেপির উদ্যোগে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, কাজ শুরু করা যায়, শেষ করা যায় না। আমাদের অনেক কাজ রয়েছে, প্রয়োজন রয়েছে, আমরা অনেক কাজের সূচনা ঘটালাম। আমরা তা শেষ করতে পারব না। ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্ব দেবেন তারা এ কাজ শেষ করবেন। শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করা ইত্যাদি কাজ এখনো বাকি রয়েছে। আমাদের চলে যাওয়ার পর যে কাজ চলমান থাকবে তা যদি পরবর্তী নেতৃত্ব সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে মানুষের কাছে জবাব দিতে হবে।
পৌর কাউন্সিলর আব্দুল কাদের হাওলাদারের সভাপতিত্বে এখানে আরো বক্তব্য রাখেন নাসিম উদ্দিন মিয়া, ওয়ালিদ হোসেন মিয়া, জি এম মাঈনুদ্দিন আহহাদ মিয়া, যুব সংহতির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ সরদার প্রমুখ।
এর আগে বিকালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ভাণ্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হাসানাত ইউসুফ জাকি, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, ইউএনও সীমা রানী ধর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আক্তার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান, উপজেলা জেপির সিনিয়র সহসভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী, তেলিখালী ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দীন হাওলাদার প্রমুখ।
এছাড়া দুপুরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ভাণ্ডারিয়ায় নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা ভবন হতে সাহিদা আক্তারের বাড়ি ও কলেমা চত্বর লিংরোড রুস্তুম আলীর বাড়ি পর্যন্ত নবনির্মিত আরসিসি সড়ক ও ড্রেনের শুভ উদ্বোধন করেন। বিকালে চরখালী বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।