ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কিছু করার। ইচ্ছে ছিল নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যা সম্ভব, তাই দিয়েই সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন। তবে শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যাননি, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই' সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুহতাসিম আবশাদ জিসান।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর ভবিষ্যৎকে বানিয়েছেন নিজের স্বপ্ন। আর সেই অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার বাসনা থেকেই নিজের একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, নাম দিয়েছেন ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই'। নামের মাঝেই যেন কাজের উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। সংগঠনের নামকরণের গল্পটি এমনই।
জিসান পড়ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনে। সংগঠনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় যেমন কাজ করছেন, তেমনিভাবে সমাজের অসহায় মানুষদের মানবিক সাহায্যদানের কাজটিও করে যাচ্ছেন সমানতালে।
স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ইচ্ছাটা তার ছোটবেলা থেকেই ছিলো। বেড়ে ওঠা এক শহুরে জীবনে। স্কুল-কলেজ ছিল রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
জিসান বলেন, ক্লাস ফাইভে থাকতে যখন বন্যার সময় টিভিতে দেখতাম স্বেচ্ছাসেবকরা জীবন বাজি রেখে ছুটে যায় বানভাসি মানুষের দোড় গোড়ায় তখন থেকেই ইচ্ছা হতো মানুষের জন্য কিছু করতে। দেখতাম এসবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিই বেশিরভাগ সময়ে এগিয়ে আসে। কাজের অনুপ্রেরণাটা তাদের থেকেই, ক্লাস সেভেনে থাকতে যুক্ত হই রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রংপুর ইউনিটে। বিভিন্ন কর্মশালা তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকি দীর্ঘদিন।
এরপর কলেজ থেকে বের হওয়ার আগে নিজের কলেজে প্রতিষ্ঠা করেন সিপিএসসিআর সায়েন্স ক্লাব। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি ভাবতে লাগলেন এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করবেন যেটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে এবং স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হয়ে পাশে থাকবে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একজন প্রতিবন্ধী অসহায় মহিলার দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করল জিসানের নিজের হাতে গড়া সংগঠন 'চলো স্বপ্ন ছুঁই'। ৩০ জন সদস্য নিয়ে চলো স্বপ্ন ছুঁই যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলায় ৪৫০ এর অধিক সদস্য রয়েছে।
এসডিজির পাঁচটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে 'চলো স্বপ্ন ছুঁই'। সব ধরণের ফুড রিলিফ এসডিজি ২ জিরো হাঙার প্রজেক্ট। নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে এসডিজি ৩ এর আওতাধীন তাদের প্রজেক্টঃ অপরাজিতা। সবার জন্য শিক্ষা, এতিম অর্থাভাবে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়তে এসডিজি-৪ এর আওতাধীন প্রজেক্ট আলোকিত বাংলাদেশ। সমাজের অসহায় নারী, অসহায় মানুষদের কর্মক্ষম করতে এসডিজি ৮ এর আওতাধীন প্রজেক্ট স্বপ্নপূরণ। পরিবেশকে সবুজে ছেয়ে দিতে, পরিবেশ রক্ষার্থে এসডিজি ১৩ আওতাধীন প্রজেক্ট ক্লাইমেট অ্যাকশন।
এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, কর্মক্ষম মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টির জন্য হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু, সেলাই মেশিন দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে চলো স্বপ্ন ছুঁই। এখন পর্যন্ত ১২২ টি পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছে চলো স্বপ্ন ছুঁই।
রংপুরে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপনের কাজ শুরু করেন তারা।
'গাছই জীবন তাতেই ভুবন, তাই করো সবে বৃক্ষরোপণ' এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে চলো স্বপ্ন ছুঁই-এর উদ্যোগে তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী করছেন।
সাহসীকতার সাথে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারীর একজন যোদ্ধা হিসেবে জিসান অর্জন করেন শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২০।
সংগঠনের সকল সদস্যই শিক্ষার্থী। তাদের টিউশন, বৃত্তির টাকায় তাদের অর্থায়ন হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সমাজের বিত্তবানদের অনেকেই তাদের সহযোগিতা করে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন পূরণই তাদের কাজের লক্ষ্য। অসহায় মানুষদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজে করে যাচ্ছেন তারা।