শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

একজন সান্তা ক্লজ

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১১:২২

সবাই পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন হাতেগোনা কয়েকজন। তাদের একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল আলম। ৩৪তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা তিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন পলাশের, এর মধ্যে হয়ে উঠেছেন উপজেলার মানুষের চোখের মণি। বদলে দিয়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার হালচাল।

একটি জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষা সবচেয়ে জরুরি। দায়িত্ব পেয়ে সবার আগে সেখানে নজর দেন তিনি। হুটহাট বিনা নোটিশে ছুটে যান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অ্যাসেম্বলির সময়ে হাজির হয়ে নিজেই অংশ নেন জাতীয় সংগীত, শপথ ও শরীরচর্চায়। অ্যাসেম্বলিতে ব্যবহার করেন ছোট মাইক৷ যাতে আশপাশের মানুষজন জানতে পারে বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে।

মাধ্যমিক পর্যায়ে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে নেন 'নো ইওর পটেনশিয়াল' নামক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিক্ষার্থীদের শক্তি সামর্থ্যের জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন রবিউল আলম। বক্তব্যভীতি দূর করা থেকে শুরু করে নিজেকে গড়ে তুলতে যা প্রয়োজন, আলোকপাত করা হয় সেসবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, উভয় পর্যায়ে গঠন করেছেন 'ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব।'

বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন ইউএনও। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করতে নিয়মিত নানান কার্যক্রম হাতে নেন। সবাইকে উপহার দেন একটি করে ফলজ ও ভেষজ গাছ। 'একটি শিশু একটি গাছ, প্রাণপ্রাচুর্যে পলাশ'- প্রতিপাদ্যে নজর দিচ্ছেন সবুজায়নে। গাছ দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে দেখে আসছেন পরিচর্যা করছে কি-না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হুটহাট চলে যাওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবসময় সতর্ক থাকে। গোছানো শ্রেণিকক্ষ, নিয়মতান্ত্রিকতা, সময়ানুবর্তিতার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন টয়লেট দেখা যায় সবখানে। যাতে শিক্ষার মান বাড়ার সঙ্গে কমছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

উপজেলার 'বড়কর্তা' হয়ে না থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। প্রতিনিয়ত তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন। যেকোনো সমস্যায় যেন তাকে নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারেন, দিয়ে আসেন নিজের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার। সুফল পাচ্ছেন এতে। কয়েক জায়গায় চলাচলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হতো, তা বন্ধ করতে পেরেছেন। উপজেলার ইচ্ছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার মাঠে বিচ্ছিন্নভাবে তিনটি গাছ লাগানো ছিল, ফলে খেলতে অসুবিধা হতো। দূর করেছেন সেটি, মাদরাসার ৫৫৭ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে খেলার মাঠ।

সার্বিক বিষয়ে মো. রবিউল আলম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের মাঝে সময়ানুবর্তিতা আনা সবচেয়ে জরুরি। শিক্ষার প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি ওদের আগামীর পৃথিবীর জন্য গড়ে তুলতে হবে। ওরা সুনাগরিক হিসেবে তৈরি হলে দেশ উন্নত হবে। তাছাড়া, না জানিয়েই পরিদর্শনে যাই বলে স্কুল কর্তৃপক্ষও সবসময় সচেতন থাকে। আমার কার্যক্রম দেখে বিভিন্ন উপজেলার মানুষজন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ভালো কাজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সবার লাভ।'

শিশুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছেন ইউএনও রবিউল। ছবি: সংগৃহীত

পলাশ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম এখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ভালোবাসার আরেক নামে পরিণত হয়েছেন। যে স্কুলেই যাচ্ছেন, সঙ্গে কিছু না কিছু নিয়ে যাচ্ছেন। কখনও ক্রীড়াসামগ্রী, কখনও গাছ। দিয়ে আসছেন প্রেরণা। যেন বাস্তবের সান্তা ক্লজ। এমন একজনের সরাসরি সান্নিধ্যে এসে নিজেদের নতুন করে খুঁজে পাচ্ছে পলাশ উপজেলার শিক্ষার্থীরা।

ইত্তেফাক/এসটিএম