‘সবুরে মেওয়া ফলে’ প্রবাদটি অন্য কারো কাছে সত্য হোক বা না হোক তা ফ্রিল্যান্সার মোস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা এবং নেশা হিসেবে গ্রহণ করে সফল হওয়া এক স্বপ্নবাজ মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এ সফলতার পথ সহজ ছিল না। বরং বাধা ও চ্যালেঞ্জ ছিল পদে পদে।
মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও মা গৃহিণী। পড়াশোনার হাতেখড়ি কওমি মাদ্রাসায়। ২০১২ সালে পাশ করেন দাওরায় হাদিস। একই বছর জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বরাবরের মতো পড়াশোনায় ভালো ছিলেন মোস্তাফিজুর। ২০১৬ সালে NIET থেকে ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর NPT পলিটেকনিকে শিক্ষকতা করেন এক বছর এবং স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান চীনে। ভর্তি হন China University of Mining and Technology বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
বরাবরের মতো সেখানেও ভালো ফলাফল করেন মোস্তাফিজ। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে BSC পাশ করেন মোস্তাফিজুর। এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন চীনের Tsinghua University-তে। উদীয়মান এ ফ্রিলান্সার নিজে ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি আগ্রহী তরুণদেরও প্রশিক্ষণ দেন, কৌশল শেখান। চীনে একজনের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখে দেশে এসে মাত্র তিন জন সদস্য দিয়ে কাজ শুরু করেন মোস্তাফিজ। তার নিজ গ্রামের একটি ঘরে শুরু হয় কাজ। স্মার্ট গেমস খেলে সময় নষ্ট করে এমন ছেলেদের নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি।
মোস্তাফিজ বলেন, ‘আমার এখানে অনেকে আছেন যারা দিনে মাঠে কাজ করে সেই কাজ শেষ করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় এসে ফ্রিল্যান্সিং করে বাড়তি টাকা ইনকাম করছেন।’
বর্তমান তার মোট কর্মী ১০০ জন। এর মধ্যে ৫১ জন করেন ফুলটাইম। আর ৪৯ জন মোবাইলে পার্ট-টাইম কাজ করেন।
দিনরাত ডলার আয়ের স্বপ্ন মাথায় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার নেশায় এদিক-সেদিক ছুটোছুটি। কাজ ভালোই চলছিল। তবে গত মে মাসে আসে প্রথম ধাক্কা। কাজ বন্ধ রাখতে হয় ২১ দিন। ক্ষতি হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। এরপর চাইনিজ আর ফ্রান্সের আইটি এক্সপার্টদের পরামর্শ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান মোস্তাফিজ।
ভবিষ্যতে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেখতে চান মোস্তাফিজ। হাজার মানুষ নিয়ে তার নিজের আইটি ফার্মে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এ পথে সফল হতে হলে যা করতে আগ্রহী সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে। অস্থির হলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যায় না।’