রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। একজন নাগরিক হিসেবে দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্ত বিষয়ে অংশগ্রহণের সমান অধিকার সবার আছে। দেশের নাগরিক হিসেবে একজন নাগরিক যে কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারে। নাগরিকদের ভোটের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন হয়ে থাকে। সরকারের কাজ হলো দেশের সমস্ত নাগরিকের নিরাপত্তা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আর জনগণের দায়িত্ব হলো দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা। সরকার যদি কোনো ধরনের ভুল, দুর্নীতি বা অন্য কোন কাজ করে থাকে তাহলে সরকারের সমালোচনা করা বা সরকারের অপরাধ ধরিয়ে দেওয়া নাগরিকের অধিকার।
দেশকে উন্নত করতে হলে দেশের নাগরিকে আগে উন্নত হতে হবে। নাগরিকের চিন্তা, চেতনা আচার-ব্যবহার এ পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের নাগরিকের মধ্যে আদর্শ চিন্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যে দেশের নাগরিক যতো বেশি আদর্শ সে দেশ ততো বেশি উন্নত। নাগরিক হলো দেশের চালিকা শক্তি। যদি কোন দেশের নাগরিক অন্য পথে চলে যায় তাহলে সেই দেশ উন্নত হওয়া সম্ভব নয়। সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের জন্য নাগরিক ও সরকারকে সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।
এখন আসি ভোটাধিকার নিয়ে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক ১৮ বছরের উপরে হলে সে নির্বাচনকালীন ভোট দেয়ার অধিকার রাখে। দেশের নাগরিক হিসেবে নির্বাচনের সময়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের নির্বাচন অফিসের সূত্র অনুযায়ী বিদেশে অবস্থানকালীন বাংলাদেশের নাগরিক কোনো প্রকার জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় ও নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার রাখে না। তাহলে আমার প্রশ্ন হলো যারা দেশের বাইরে থাকে শুধু দেশে টাকা পাঠানো ছাড়া যাদের ভোটাধিকার নেই বা অন্য কোন অবদান নেই তারা কীভাবে বিদেশে দেশীয় রাজনীতি করে থাকে? কেনই বা তারা দেশীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়? এতে তাদের কি লাভ বা সরকারের বা অন্য দলের কি লাভ হয়ে থাকে? কেনইবা এক দলের লোক অন্য দলের সঙ্গে বিরোধে জড়ান?
এখন আসা যাক অন্য দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে। তারা যদি অন্য দেশে বসবাস করে থাকে তাহলে তাদের কি জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে নাকি নাই?
আমি পোল্যান্ড বা ইউরোপের অন্য কোন দেশের নাগরিকদের কথা যদি বলি তাহলে দেখবো তারা অন্য দেশে অবস্থানরত অবস্থায় নির্বাচনের সময় তারা সেই দেশ হতে নিজ দেশে ভোট দিতে পারে। ভোট দেয়ার শর্ত হলো তারা যে দেশে আছে ওই দেশে এম্বাসিতে যেয়ে আইডি কার্ডের মাধ্যমে ফরম ফিলাপ করে তারা ভোট দিতে পারবে।
ইউরোপের নাগরিকদের অন্য দেশে বসবাস করার সময়ে ভোট দেয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও তারা একে অপরের সাথে মারামারি বা অন্য রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং বা নিজেদের মাঝখানে বিভেদ সৃষ্টি করে না। তারা এমন কিছু করে না যা তাদের দেশের জন্য অসম্মান হয়।
আমরা বাঙালিরা পুরোটাই উল্টো। বিদেশে বা উন্নত দেশে থাকার শর্তেও আমাদের আচারণের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমি লন্ডনে বসবাস করার সময় অনেক দলের নেতাদেরকে দেখেছি যারা একে অপরের সাথে ঝগড়া বা মারামারি করেছে এবং একে অপরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে। অথচ তারা সবাই বাংলাদেশি।
ইউরোপ, লন্ডন এবং আমেরিকাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য দলের কমিটি থাকার ফলে একজন বাঙালি আরেকজন বাঙালির মাঝখানে ভালোবাসা নষ্ট হয়েছে। আমি দেখেছি যখন আওয়ামী লীগের কোন নেতা ওই দেশে গিয়েছে তখন বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে মিছিল করেছে। এমনকি যখন বিএনপি'র কেউ লন্ডনে গিয়েছে তখন আওয়ামী লীগের সমর্থক গোষ্ঠী বাইরে মিছিল-সমাবেশ বা শ্লোগান দিতে দেখেছি। যার ফলে ওই দেশের নাগরিক বা সরকার আমাদের দেশ সম্পর্কে বা আমাদের দেশের সরকার সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়েছে। যার প্রতিদানস্বরূপ আমাদের মতো সাধারণ নাগরিক বিদেশের মাটিতে ফল ভোগ করতে হয়েছে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা, লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে। আমাদের কারণেই বিদেশিরা আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতি নিয়ে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। আসলে আমাদের বিদেশে আসার প্রধান লক্ষ্য কি একে অপরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা? বা দেশের সুনাম নষ্ট করার নাকি দেশে সুনামকে সুন্দরভাবে বিদেশিদের কাছে উপস্থাপন করা বা একে অপরের সাথে ভালোবাসা স্থাপন করা।
এখন কিছু কথা বলি আমি যে দেশে আমি থাকি, পোল্যান্ডে আগে রাজনৈতিক দল ছিল না ।যার ফলে প্রতিটা বাঙালি একে অপরের সাথে ভালোবাসার বন্ধন ছিল অটল। কিছুদিন যাবত দুই দলে বিভক্ত হওয়ার ফলে একে অপরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে এবং এমনকি সাধারণ মানুষ একজন আরেকজনের সাথে ছবি তুলতেও দ্বিধা বোধ করে কারণ প্রকাশ্যে প্রকাশ পাবে আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি বা অন্য কোন দলের। শুধু রাজনীতি দলের ফলে একে অপরের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তাহলে কেন এই রাজনীতি? রাজনীতি আমাদেরকে কি দেবে বিদেশের মাটিতে? বিদেশের মাটিতে আমাদের একটাই পরিচয় হওয়া উচিত আমরা বাংলাদেশি। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের না আছে কোন দল না আছে কোন বর্ণ না আছে কোন ধর্ম। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। আমি বিশ্বাস করি,বিদেশে আমাদের একটাই পরিচয়, আমি বাংলাদেশী, আমরা সবাই বাংলাদেশি।
মোঃ হুসাইন আলমঃ প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ গ্রাজুয়েট কলেজ, পোলান্ড