বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

‘মা’কে ভীষণ মনে পড়ে

আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৯:৪৪

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ‘মা’ দিবস। কর্মস্থল থেকে ‘মা’কে নিয়ে স্মৃতিচারণ লিখতে বলা হয়েছে। লেখা যদি ভালো হয় তাহলে সংবাদমাধ্যমের ফিচারে ছাপাতেও পারে। এমন ভাবনা থেকে যে কেউ জন্মদাত্রী ‘মা’কে নিয়ে দুই লাইন লিখতে চাইবে। কিন্তু যাদের ‘মা’ নীরবে চলে গেছে দূর আকাশের তারা হয়ে, তাদের জন্য এটা বেশ কঠিন কাজ।

এক শোকাভিভূত অভিজ্ঞতা থেকে ‘মা’কে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। সন্তানের জন্য ‘মা’ কত বড় আর্শীবাদ সেটা ‘মা’ হারানো একজন সন্তানের থেকে আর কে ভালো জানবে।

জন্মের পর থেকে শুরু করে শৈশব কৈশোর এবং যৌবনের প্রতিটি পর্যায়ে ‘মা’ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মায়ের হাতে ভর দিয়ে পদচারণা শুরু, মায়ের চোখে পৃথিবী দেখা, গল্প শোনা, কলম ধরে এলোমেলো কিছু লিখতে চেষ্টা করা, আবার কখনো একটু ভয় পেয়ে মুরগির ছানার মতো বুকের মধ্যে লুকিয়ে পড়া, খানিক বাদে বের হয়ে আবার আকাশ দেখা এমন অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মানুষটির সঙ্গে।

এভাবেই মায়ের ছায়াতলে সন্তানরা দিন দিন বড় হয় আর তারা ছোট হতে থাকে। একজন ‘মা’ নিজের সবকিছু বিসর্জন দেয় তার সন্তানের ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য। এজন্যই বোধহয় মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর একমাত্র স্বার্থহীন সম্পর্ক। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী সর্বত্রই মায়ের মর্যাদা সবার ওপরে। আর তাই পৃথিবীর সব ধর্মে ‘মায়ের মর্যাদা’কে সৃষ্টিকর্তার পরের অবস্থানে রাখা হয়েছে। 

পৃথিবীতে ‘মা’ বেঁচে থাকাটা একটা সন্তানের জন্য যে কতোটা সাহসের, অনুপ্রেরণার সেটা বোধহয় ‘মা’কে হারানোর পরেই বেশি অনুভব হয়। একজন ‘মা’ হচ্ছেন সন্তানের কাছে এমন এক ব্যাংকের ন্যায় যেখানে যত খুশি ঋণ নেওয়া যায় কিন্তু পরিশোধ না করলেও কোনো জেল জরিমানা হয় না।

মা সন্তানের ভালোবাসা চিরন্তন

এতো তাড়াতাড়ি ‘মা’কে হারিয়ে ফেলবো সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। মাসে দুই-একবার মায়ের সঙ্গে দেখা হতো। মায়ের চোখে আমি ছিলাম ভীষণ অবাধ্য, রোগা, না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি ইত্যাদি। ডায়বেটিস এর কারণে ‘মা’ চোখে কম দেখতো অথচ সন্তানের চোখের নিচে কালো দাগ, বড় বড় চুল, কিংবা গলার নিচের হাড় এসব আর কেউ না দেখলেও কেবল মা দেখতে পেতেন। খাবার নিয়ে পেছনে পেছনে এই ঘর থেকে ওই ঘরে মায়ের দৌড় ঝাঁপের স্মৃতি প্রতিনিয়ত দাগ কেটে যাচ্ছে বুকের গভীরে। সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন ‘মা’কে ভালো রাখেন।

ইদানীং কর্মব্যস্ততা কিংবা আড্ডার মধ্য দিয়ে ‘মা’কে হারানোর কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। একসময় রাতে ঘুমাতে গিয়ে যখন মায়ের কথা মনে পড়ে তখন বুকের ভেতরটায় একটা গভীর ব্যাথা অনুভব হয়। কখনো কখনো ‘মা’য়ের চলে যাওয়াটা মানতে পারি না। মায়ের স্মৃতি আমাকে প্রতিনিয়ত ভীষণভাবে ভাবায়, বাড়াতে থাকে দীর্ঘশ্বাস।

ইত্তেফাক/এবি/পিও