শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভিসা-নীতি 

আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ০০:২৭

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশের জন্য ভিসা-নীতি ঘোষণা করিয়াছেন। বিশেষ করিয়া বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া প্রদত্ত এই ভিসা-নীতিতে বলা হইয়াছে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করিতে বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করিবে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভিসা-নীতি অনুসারে ইহার আওতার মধ্যে পড়িবেন সরকারদলীয় ব্যক্তি, বিচার বিভাগের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মী হইতে শুরু করিয়া যাহারাই বাধা প্রদানে জড়িত থাকিবেন। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বারবার বলিয়া আসিতেছেন। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী দলকে কেবিনেটে পোর্টফোলিও অফার করিয়াছিলেন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশায়; কিন্তু তাহার পরও নির্বাচন প্রক্রিয়া বারে বারে বাধাগ্রস্ত হইয়াছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তাটি ইতিবাচক ও পরিষ্কার। তাহারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখিতে চাহিতেছে। ইহা সকল দল ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক পদক্ষেপ। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ভিসা-নীতি ঘোষণা সাহায্য করিবে বলিয়াই আমাদের ধারণা। আমরাও এই দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিসা-নীতিকে স্বাগত জানাই। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিতে চাই; কিন্তু যাহারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায় বা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করিতে পারে তাহাদের চিহ্নিত করিবার উপায় কী হইবে? যুক্তরাষ্ট্র তাহাদের লওয়া এই নীতি বাস্তবায়ন করিতে কী কী পন্থা গ্রহণ করিবে? নিশ্চয়ই তাহারা তাহাদের বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করিবেন। তবে কে বা কাহারা কোথায় অসহযোগিতা করিতেছে তাহা সঠিকভাবে সংগ্রহের কাজটি নিশ্চয়ই খুব সহজসাধ্য নহে। যাহারা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করিতে চাহিবে তাহাদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাইতে কি ৯৯৯ নম্বরের মতো কোনো হটলাইন ব্যবহার করা হইবে? এই ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি নিশ্চয়ই সহায়ক হইবে। আবার তথ্যসূত্র সঠিক না হইলে নিরপরাধ ব্যক্তিও ক্ষতির শিকার হইতে পারেন, উহাও নিশ্চয়ই তাহারা জানেন।  

বিগত দিনে আমরা পশ্চিমা বিশ্ব হইতে পর্যবেক্ষক আসিতে দেখিয়াছি। হয়তো সামনের নির্বাচনেও তাহারা আসিবেন; কিন্তু যাহারা অবজারভেশন মিশনে আসিবেন, তাহারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও পরিবেশ সম্পর্কে কতটা খোঁজ রাখিতে পারেন বা পারিবেন? একটি উপজেলায় নির্বাচনকালে ৫০ হইতে ১০০ জন সরকারের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। এই রকম জনবহুল একটি দেশে কত লক্ষ লোক নির্বাচন প্রক্রিয়ার সহিত জড়াইয়া থাকেন। ফলে দেশের হউক বা বিদেশের হউক, তাহারা কী প্রক্রিয়ায় দেখিবেন যে নির্বাচনে কী করিয়া বাধাগ্রস্ত করা হইয়াছে? এই ধরনের প্রক্রিয়া যাহারা বাস্তবায়ন করেন তাহারা রাজনীতির সহিত যুক্ত নহেন; কিন্তু রাজনীতিবিদদের দুর্ভাগ্য হইল, যাহারা রাজনীতি করেন না, তাহাদের হাত দিয়াই রাজনীতিবিদদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। সুশীল সমাজ, আমলা, বুদ্ধিজীবী—যাহারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না তাহারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলিয়া থাকেন। অবশ্যই বলিতে পারেন; কিন্তু বিব্রত হইতে হয় যাহারা তিন-চার দশক ধরিয়া রাজনীতির সহিত, জনগণের ভালোমন্দের সহিত জড়াইয়া আছেন—তাহাদের। সুতরাং আমরা যতই এই নীতিকে সমর্থন করি না কেন, ইহা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি এক কথায় সহজ হইবে না বলিয়াই আমাদের ধারণা।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন