বিগত বেশ কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’র ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ তালিকায় বাংলাদেশি তরুণদের জয়জয়কার। অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা তরুণদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে থাকে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন। ২০২৩ সালের এশিয়ার ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ তালিকায় সাত জন বাংলাদেশি জায়গা করে নিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশি তরুণেরা এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ক্ষেত্রগুলো হলো— সামাজিক প্রভাব, কনজ্যুমার টেকনোলজি, গণমাধ্যম, বিপণন ও বিজ্ঞাপন। এ বছর ১০টি বিভাগে ৩০ জন করে নির্বাচিত হয়েছেন। এ তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি তরুণেরা হলেন—
জাহ্নবী রহমান, সহপ্রতিষ্ঠাতা, রিল্যাক্সি
জাহ্নবীর বেড়ে ওঠা ঢাকায়, পড়াশোনা করেছেন রুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে একটা লম্বা সময় কেটেছে ডিপ্রেশন ও এংজাইটির সাথে। তিনি চেয়েছিলেন তার মতো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় ভুগতে থাকা মানুষদের পাশে থাকতে। দুই বন্ধু নাইমুল হক জয় ও সামিউল ইসলাম স্বপ্নীলকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালে ফেসবুক পেজ হিসেবেই যাত্রা শুরু করে ‘রিল্যাক্সি’।
শুরুতে পডকাস্ট এবং ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সাইকোলজিস্টদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা দিকের আলোচনা করা হতো। এছাড়াও এক হাজারের বেশি মানুষকে ফ্রি সাইকো থেরাপির সেশনও দেওয়া হয় ‘রিল্যাক্সি’ পেজ থেকে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে এর মোবাইল অ্যাপ।
‘রিল্যাক্সি’কে ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান জাহ্নবী। মূলত সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট বা সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন জাহ্নবী।
দীপ্ত সাহা, সহপ্রতিষ্ঠাতা, অ্যাগ্রোশিফট টেকনোলজিস
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের উত্পাদিত কৃষি পণ্য সঠিক সময়ে, ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করতে পারেন না। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অ্যাগ্রোশিফট টেকনোলজিস’। এটি মূলত একটি কৃষিভিত্তিক সরবরাহব্যবস্থা বা প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাংলাদেশের প্রান্তিক এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারেন।
এর ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েরই ভোগান্তি অনেকাংশে কমে এসেছে। ন্যায্যমূল্যে টাটকা সবজি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ‘অ্যাগ্রোশিফট’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
আনোয়ার সায়েফ ও সারাবন তহুরা, প্রতিষ্ঠাতা, টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও
আনোয়ার সায়েফ ও সারাবন তহুরা তাদের ‘টার্টল ভেঞ্চার’ স্টুডিওর জন্য সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট বা সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে স্টার্টআপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিকে করেছে বেগবান। ‘টার্টল ভেঞ্চার’ স্টুডিও মূলত নতুন স্টার্টআপদের অর্থায়ন বিষয়ক কাজে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও তাদের জন্য পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ‘টার্টল ভেঞ্চার’। এর ফলে নতুন স্টার্টআপগুলো খুব সহজেই বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারছে। বিগত বছরগুলোতে তারা প্রায় ১০০টি নতুন স্টার্টআপের সাথে কাজ করেছে এবং তারা বিনিয়োগ পেতে সক্ষম হয়েছে।
আজিজ আরমান, প্রতিষ্ঠাতা, যাত্রী
ঢাকা শহরের ‘গণপরিবহন’ নাগরিকদের জন্য যেন ভোগান্তির আরেক নাম। সাধারণ মানুষের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সহনীয় করে তোলার লক্ষ্যে আরমান আজিজ তার প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘যাত্রী’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘যাত্রী’ মূলত ঢাকার গণপরিবহনের জন্য ই-টিকিটিং সেবা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল ঢাকার বাস মালিকদের ই-টিকিটিং সেবার সাথে সংযুক্ত করা। ২০২২ সালে ঢাকার বাস মালিকদের সংগঠন প্রায় ৫ হাজার ৭০০টি বাসের জন্য ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করতে সম্মত হয়। এ উদ্যোগের ফলে নাগরিকদের ভাড়া সংক্রান্ত ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমে এসেছে। তাদের এ উদ্যোগ প্রসংশিত হচ্ছে সব মহলে।
এখন পর্যন্ত এ স্টার্টআপ ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। আরমান আজিজ কনজ্যুমার টেকনোলজি শ্রেণিতে এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
রুবাইয়াত ফারহান ও তাসফিয়া তাসবিন, প্রতিষ্ঠাতা, মার্কোপলো ডট এআই
বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেকাংশে নির্ভর করে অনলাইনের ওপর। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘মার্কোপলো ডট এআই’ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিপণন করে থাকে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সহজেই ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে বিপণন করা সম্ভব হচ্ছে। ‘মার্কোপলো ডট এআই’ মূলত পরিচালিত হয় মেশিন লার্নিং মডেলের মাধ্যমে। ব্যবসায়ীরা সহজেই ‘মার্কোপোলো ডট এআই’র মাধ্যমে খুব সহজেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপণন পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারেন। এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে অল্প সময়েই। রুবাইয়াত ফারহান ও তাসফিয়া তাসবিন গণমাধ্যম, বিপণন, বিজ্ঞাপন শ্রেণিতে এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।