রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বুশরা আফরিন

এশিয়ার প্রথম চিফ হিট অফিসার

আপডেট : ৩১ মে ২০২৩, ০১:২৯

‘চিফ হিট অফিসার’ পদটি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে। কী এই পদ, কী এর কাজ—তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। এই পদে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন, তার নাম বুশরা আফরিন। কেবল ঢাকা নয়, এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম চিফ হিট অফিসার এই বাংলাদেশি তরুণী। উচ্চশিক্ষিত বুশরা আফরিন ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে কাজ করতে চান। আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার পাশাপাশি আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়নও তাপমাত্রা বাড়ার ক্ষেত্রে দায়ী। কারণ, শহরগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছপালা নেই, খোলা মাঠ বা জলাধার নেই, সবকিছু উজাড় করে দিনের পর দিন কেবল কংক্রিটের আবরণ আর দালান তৈরি করা হয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে ‘হিট আইল্যান্ড’, যা প্রকৃতির তাপ শোষণ করছে না, বরং প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। বুশরা আফরিনের উদ্দেশ্য হলো, মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি ভিন্ন কিছু করবেন, যা অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনবে।

বুশরা আফরিনের একটি পরিচয় হলো তিনি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে। এই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। মেয়রের মেয়েকেই কেন এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো, এ নিয়ে অনেকে জল ঘোলা করেছেন। তবে খানিক পরেই জানা গেছে, বুশরার নিয়োগকর্তা সিটি করপোরেশন নয়; অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার (আর্শট-রকফেলার) নামক একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থার বিশেষ কর্মসূচির অংশ এটি। বাংলাদেশে বুশরা আফরিন তার কর্মকাণ্ড সমন্বয় করবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে। বিভিন্ন দেশের আরও ছয়টি শহরে একইভাবে হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করা। আর সমালোচনার জবাবে বুশরা বলেছেন, ‘মেয়রের মেয়ে হওয়া আমার কোনো অযোগ্যতা নয়। আমি বরং পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে চাই। আর আমার বাবা মেয়র, এটা আমাকে বাড়তি সুবিধা দেবে, আমি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সহজে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করতে পারব।’

ঢাকায় মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পর কানাডায় উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন বুশরা আফরিন। এরপর কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক করেন। ঘানার ইনস্টিটিউট অব লোকাল গভর্নমেন্ট স্টাডিজেও পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন সমাজকল্যাণে। শক্তি ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা নির্বাহী হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। পারিবারিকভাবে তাদের গার্মেন্টসের ব্যবসা রয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি টেকসই পণ্য সরবরাহের অগ্রগতির বিষয়েও কাজ করেছেন বুশরা। সেখানে তার নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ ছিল পোশাক কারখানায় তাপমাত্রা হ্রাসে কাজ করা। প্রাণীকল্যাণ আইনের পরিবর্তন-পরিমার্জনের ব্যাপারে পলিসি অ্যাডভোকেসি কনসালট্যান্ট হিসেবে প্রাণীকল্যাণ সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’র হয়েও কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সৃজনশীল উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশে বছরের গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি  সেলসিয়াস হলেও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে তা আরও বেশি অনুভূত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গত এক মাসেই ঢাকার তাপমাত্রা ছয় দশকের সর্বোচ্চকে অতিক্রম করেছে। এ প্রসঙ্গে বুশরা বলেন, ‘ঢাকাকে বারবার বসবাসের অযোগ্য হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা একটু সচেতন হলে হয়ত এ অবস্থা বদলাতে পারতাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে। ওই গাছগুলোর পরিচর্যায় স্থানীয়রা সম্পৃক্ত হতে হবে। তাদের সংগঠিত করা আমাদের লক্ষ্য থাকবে। তাপপ্রবণ এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির কল স্থাপনের চেষ্টা করব। মূলত পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের কাজ সমন্বয় করাই চিফ হিট অফিসার হিসেবে আমার দায়িত্ব হবে। এছাড়া আমি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে তহবিল জোগাড়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

নিজের শিশুসন্তানসহ আগামী প্রজন্মের সবার জন্য শীতল ও সমতার শহরের স্বপ্ন দেখেন বুশরা আফরিন। চিফ হিট অফিসার হিসেবে জনসচেতনতা তৈরির কাজে তিনি কতটা সফল হতে পারেন, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

ইত্তেফাক/এসটিএম