শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুঃখ হয় উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য!

আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ০৪:২৬

উন্নয়নশীল বিশ্বে যিনি বা যাহারা যে প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসেন তাহা গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখিবার বিষয়। কেহ কেহ পূর্বসূরি এক জনের নাম ও কর্ম বিক্রয় করিয়া ক্ষমতারোহণ করেন। ইহার পর যাহাদের লইয়া ৪০ হইতে ৫০-৬০ জনের ক্যাবিনেট গঠন করা হয় সেইখানেও দেখা যায় ‘প্রশ্ন’। প্রথমত, এই লোকগুলিকে কীসের ভিত্তিতে নেওয়া হয়? দেখা যায়, তিনি বা তাহারা দল ও নেতার জন্য কী করিয়াছেন, মামলা-হামলার শিকার, জেল-জুলুমসহ কতভাবে ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন তাহা বিবেচনায় লইয়াই সরকারপ্রধান তাহার টিম গঠন করেন; কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা, শিক্ষাদীক্ষা ইত্যাদি প্রায়শই বিবেচনায় রাখা হয় না। এইখান হইতেই উন্নয়নশীল বিশ্বের এক নম্বর ব্যক্তির হতাশা তৈরি হয়।

শুধু উন্নয়নশীল বিশ্ব নহে, উন্নত বিশ্বেও নির্বাচনের পর সরকার গঠনের দিন হইতে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকে পরবর্তী সময়ে তাহারা কীভাবে আবার নির্বাচিত হইয়া ক্ষমতার মসনদে বসিবেন। তবে পার্থক্য হইল, উন্নত বিশ্বে যাহারা রাজনীতিতে আসেন, রাজনীতি তাহাদের একমাত্র পেশা ও নেশা নহে; কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে রাজনীতিই পেশা ও নেশা হইয়া থাকে। ইহা সত্ত্বেও এই নেশা দিয়া কাজ হয় না। এই যে দাকৃচ্ছ সাধন করিয়াছেন। এখন যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিতেছে, তখন তাহারা ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছেন; কিন্তু আফসোস উন্নয়নশীল দেশের জন্য! সংকটকালেও তাহারা যেমন আতশবাজিসহ ফানুস উড়াইয়াছেন, এখনো কেহ কেহ দিব্যি চলিতেছেন রাজার হালে। তাই এই সকল দেশের এক নম্বর ব্যক্তির অবস্থা দেখিলে সহানুভূতি না জাগিয়া পারে না। কোনো কোনো পণ্যের মূল্য যখন আকাশচুম্বী, তখন তাহাকে শেষমুহূর্তে হস্তক্ষেপ করিতে হয়, সেইপণ্য আমদানির বিশেষ নির্দেশ দিতে হয়। ইহার মধ্যে কাহারা আখের গুছাইয়া নেয়, এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও অজানা থাকে না। জনগণের কষ্ট দেখিয়া তখন হা-হুতাশেরও কোনো মূল্য থাকে না। বরং তখন জনমনে এই প্রশ্নও দেখা যায়, তাহারা অর্থ দিলেও বিভিন্ন দেশের কোম্পানির নিকট বকেয়া পড়িয়া থাকে কীভাবে? সুখের পায়রা আমলারা অধিকাংশ সময় দেশের প্রকৃত অবস্থা সরকারপ্রধানকে বুঝিতে দেন না। তাহাদের তোষামোদির ঘোর কাটিতেই দেখা যায় খালি হইয়া পড়িয়াছে রাজভান্ডার। অপচয়কারী ও লুটের দলেরা মাকড়সার মতো গর্ভধারিণীকেও খাইয়া ফেলে। এই অবস্থা এক দিনে তৈরি হয় না।

বর্তমানে যখন পৃথিবীর অবস্থা উন্নতির দিকে, তখন উন্নয়নশীল বিশ্বের সরকারগুলি যেন হাত-পা ছাড়িয়া দিয়াছে। তাহারা সূর্যের দিকে তাকাইয়া তপস্যা করিয়া চলিয়াছে। বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্য যখন বৃদ্ধি পাইতেই থাকে, তখনো এই সকল সরকারের অবস্থা হইল ‘দেখি ব্যাটা করে কী’। এইজন্য এই সকল দেশে বিভিন্ন সরকারের উত্থান উল্লাসের মধ্যে হইলেও পতন হয় শেক্শেপরিয়ান ট্র্যাজেডির মতো।

 

 

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন