মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

লার্ভিসাইড ও জনসচেতনতা

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৫:৩৫

রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লইয়াছে। এই লইয়া জনমনে বাড়িতেছে উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো মৃত্যুর খবর আসিতেছে। বিশেষত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইতেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু। তাহাদের যেই সকল খবর ও ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হইতেছে তাহা মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। গতকাল ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল এমন—‘ডেঙ্গুতে রেকর্ড সাত জনের মৃত্যু : শনাক্ত হাজার ছাড়াল’। এইভাবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়িতেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু বিষয়ক বিশেষ বার্তা প্রদান করিয়া মানুষকে সচেতন করিবার চেষ্টা করিতেছে। ইতিমধ্যে আগামী এক মাস সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে। এমন সংকটের সময় এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

ডেঙ্গু এমন একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যেইখানে সচেতনতাই প্রধান দাওয়াই। এই সচেতনতার কথা আমরা বহুদিন ধরিয়া বলিয়া আসিতেছি। এই জন্য আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করিতে হইবে। নিজের বাড়ির ভিতর ও বাহির তো বটেই, এমনকি আশপাশের পরিবেশ কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হইল, সেই ব্যাপারে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করিতে হইবে। এইখানে সরকারের কোনো দায়িত্ব নাই—এই কথা আমরা বলি না। সমগ্র দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশ ধ্বংস করিতে সরকারকে সমন্বিত, কার্যকর ও ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে লইতে হইবে। স্থানীয় সরকারগুলির উচিত স্থানীয় জনগণকে বিশেষত রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলির সহিত যোগাযোগপূর্বক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে লইয়া এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করিতে হইবে। এত কিছু লেখালেখি ও প্রচার-প্রপাগান্ডার পরও আমরা সচেতন হইতেছি না কেন? এই প্রশ্নটি আজ বড় হইয়া উঠিয়াছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগতভাবেও এই জন্য উদ্যোগ লওয়া যায়। একটি ফগার মেশিনের মূল্য কত? ইহা ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে ক্রয় করিয়া লওয়া কোনো কঠিন কাজ নহে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাইতেছে এবং এই জন্য সিটি করপোরেশন জরিমানা করিতেছে। আমাদের কথা হইল, বাজারঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখভাল করিবার জন্য নির্দিষ্ট কমিটি বা কর্তৃপক্ষ রহিয়াছে। তাহারা কেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বা এলাকার চারিপার্শ্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিতে উদ্যোগী হইবেন না?

মশক নিধনে সরকারের যেইটুকু করিবার দরকার তাহা অবশ্যই করিতে হইবে। তবে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন অসুখবিসুখের মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত ভূমিকা পালন করিতে হইবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কনট্রোল রুম হইতে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৩০৩ জন রোগী চিকিত্সাধীন রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ঢাকার ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রহিয়াছে ২ হাজার ৩০৬ জন। অর্থাত্ ডেঙ্গু সমগ্র দেশে ছড়াইয়া পড়িলেও রাজধানীর অবস্থাই অধিক শোচনীয়। উল্লিখিত সূত্র অনুযায়ী এই বৎসর এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হইয়া ১৪ হাজার ৮৯৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছে। তাহার মধ্যে মৃত্যুবরণ করিয়াছে ৮৩ জন। তাই অনেকে বিষয়টিকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট হিসাবে বিবেচনা করিতেছেন।

সাধারণত বর্ষাকালেই ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তার হইয়া থাকে। ইহার পিক বা সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় জুলাই মাসের পর হইতে; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার গ্রীষ্মকাল হইতেই ইহার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়াছে। কীটতত্ত্ববিদগণ বলিতেছেন, এইবার এডিস মশার ঘনত্বটা একটু অধিক। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল সবচাইতে ভয়াবহ। সেই বত্সর ১ লক্ষ ১ হাজার ৩৫৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১৭৯ জন। তবে সবচাইতে অধিক মারা যায় ২০২২ সালে, ২৮১ জন। ডেঙ্গুর মোট চারটি ভ্যারিয়েন্ট রহিয়াছে। ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা একাধিকবার আক্রান্ত হইলে তাহার ফল হইয়া থাকে মারাত্মক। এই জন্য এই সকল ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে মানুষকে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সতর্ক করিয়া তুলিতে হইবে। ইহার পাশাপাশি লার্ভিসাইডের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হইবে। কীটপতঙ্গের মধ্যে মশাবাহিত রোগেই পৃথিবীর অধিকসংখ্যক মানুষ মারা যায় বিধায় এই ছোট্ট পতঙ্গটির ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন