ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়েত অনুভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সেমিস্টার শেষে অবকাশ কাটাতে একটা বড় ছুটি পাওয়া যায়। এসময়ে বাড়িতে অবস্থান করেন সাফায়েত। বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে, ঘুরাঘুরি করে কাটিয়ে দেন পুরোটা সময়।
সাফায়েতদের বাসা গাইবান্ধা সদরে। একবার ছুটিতে বাড়ি ফিরে তিনি লক্ষ্য করেন তাদের এলেকার বিভিন্ন স্থানে কারণে-অকারণে গাছ কাটা হচ্ছে। কখনো গৃহস্থান নির্মাণ, কখনো আবার রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে কেটে ফেলা হচ্ছে ছোট-বড় অজস্র গাছপালা। ফলে একদিকে যেমন শহরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। যারা শহরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখে, পথচারীদের সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করে—তাদেরকেই উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে!
ব্যাপারটা দারুণ ভাবিয়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই তরুণকে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে—এমন চিন্তা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করে বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ গড়ে তুলবেন। তবে একার পক্ষে তা সম্ভব নয়।
এজন্য জোগাড় করেন সমবয়সী কয়েকজন বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আরো কিছু তরুণদের। তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেন এই প্রতিবাদে অংশ নিতে। সবাই রাজি হলে গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নেওয়া হলো। কিন্তু দুই-একদিন বাদেই ছুটি শেষ হয়ে আসলো সবার। তাই সেবার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যেতে হয় ক্যাম্পাসে। তবে পরের ছুটিতে আর কালক্ষেপণ হয়নি। বাড়ি ফিরেই কাজে নেমে পড়েন সবাই। ঈদের সালামি আর নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে স্থানীয় এক নার্সারি থেকে ফলজ বৃক্ষ কিনেন এবং গাইবান্ধা সদরের প্রায় সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় পর্যায়ক্রমে ঘুরে ঘুরে তা রোপণ করেন।
রোপনকৃত বৃক্ষের যেন যত্ন-তুষ্টির কোন অভাব না হয় এজন্য স্থান হিসাবে বেছে নেওয়া হয় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণকে। ৭দিন ব্যাপী চলে এই বৃক্ষরোপণ অভিযান। একাজে সাফায়েতের সঙ্গে ছিলো মুগ্ধ, তাসিন, শুদ্ধ, মেহেরাব, আবির, রেদোয়ানুল, নাফিস, সাজ্জাদ, ইসতিয়াকসহ আরো কয়েকজন। তারাও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বৃক্ষরোপণ পর্বের সমাপ্তির পরে তার ঠিক করেন গাইবান্ধা সদরে জন্ম নেওয়া সকল নবজাতকের পরিবারকে একটি করে বৃক্ষ উপহার দিবেন। সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি সময়ে স্থানীয় সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া শিশুদের একটা তালিকা নির্ণয় করেন। এরপর সেই পরিমাণ ফলজ চারা সংগ্রহ করে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
ইত্তেফাক প্রজন্মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাফায়েত বলেন, ‘যেকোন সামাজিক উন্নয়নে কেবল জন প্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নন, সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। আমাদের ইচ্ছা রয়েছে এই কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করে গাইবান্ধার অন্যান্য উপজেলাতে ছড়িয়ে দেওয়ার’।