যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুরসহ তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিলিন হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজিপুরের প্রত্যন্ত তেকানী ও চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভূতের মোড়ে যমুনা নদীতে ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে। এতে প্রায় ডজন খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। এলাকার লোকজন তাদের ঘরবাড়ি ও ভূতের মোড়ের দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি চর সরিষাবাধ দক্ষিণপাড়া, চৌবাড়িয়া এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে।
চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা বলেন, ভূতের মোড় এলাকা রক্ষার প্রয়োজনে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চলমান রাখা দরকার। বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) এগিয়ে আসার অহ্বান জানান তিনি।
কাজিপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়নের কান্তনগর, চরকান্তনগর ও চর আদিত্যপুরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের অন্তত দেড়শ বিঘা ফসলি জমি যমুনার পেটে গেছে। ভাঙনে কান্তনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, চরকান্তনগর তালুকদারবাড়ি মসজিদ এবং প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনে ভিটেহারা কান্তনগরের আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, দেখতি দেখতি (দেখতে দেখতে) আমাগোর সব ঘরবাড়ি ভাইঙ্গ্যা নদীত চইল্যা গ্যালো। চোহের (চোখের) সামনেই সব হারাইলাম। কিছুই কইরব্যার পাইরল্যাম না (করতে পারলাম না)।
তেকানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ বলেন, ভিটেহারা মানুষগুলো এখন চরের মধ্যে বসবাস করছে। ভাঙন অব্যাহত আছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে উপজেলায় জমা দিয়েছি। এখনো কোনো সহায়তা পায়নি নদীভাঙা মানুষগুলো।
এদিকে, চরাঞ্চলের আরেক ইউনিয়ন নিশ্চিন্তপুরের ডিগ্রি দোরতায়ও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ইউনিয়ন রক্ষায় নির্মিত বাঁধের প্রায় সোয়া কিলোমিটার ধসে গেছে। অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। শেষ রক্ষা হয়নি ডিগ্রি দোরতা উচ্চবিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টির চালা খুলে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে একদিন আগেই। ঘরের জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
চৌহালী উপজেলার ইউএনও মাহবুব হাসান জানান, ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সহায়তা পেলে বিতরণ করা হবে।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ করতে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
কাজীপুর উপজেলা ইউএনও সুখময় সরকার বলেন, ভাঙন কবলিতদের তালিকা হচ্ছে। সরকারি কোনো বরাদ্দ এলেই তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তো অনুদানের তেমন ব্যবস্থা এখনো নেই।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাঙনস্থলে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এখনো কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তবে চরাঞ্চল রক্ষায় একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলছে। এছাড়া চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া থেকে চর সলিমাবাদ পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ চলছে