ধরলার তীব্র ভাঙনে মায়ের কবর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বদিরুজ্জামান মিয়া (৫৮)।
গত এক মাস আগে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ভিটা-বাড়ির ১৬ শতক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঠাঁই নেন আবাসনের মাঠে। সেখানে দুইটি ছোট ঘর তোলে অতি কষ্টে দিন পার করছেন। কিন্তু মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাতে শেষ স্মৃতি মা জোবেদা খাতুনের কবরটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বদিরুজ্জামান মিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
বদিরুজ্জামানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর চর-গোরকমন্ডল গ্রামের। স্ত্রী, আট বছরের ছেলে ও ১৪ বছরের মেয়ে নিয়ে তার সংসার ।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক থেকে দেড় মাস আগে উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বদিরুজ্জামান মিয়ার বাড়ীর সামনে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হাফ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে শতশত বিঘা ফসলি জমি ও ১৫ থেকে ২০ পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হলেও কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধের জন্য ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পাড়ছে না।
কান্নাজড়িত কন্ঠে দিনমজুর বদিরুজ্জামান মিয়া বলেন,ধরলার ভাঙনে অনেক মানুষের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। তারপরেও ওই সব মানুষ আমার মত কষ্টে বা দুঃখে নেই। অনেকের জমিজমা থাকায় অন্য স্থানে নতুন করে বাড়ী-ঘর তৈরী করে থাকছেন। কিন্তু আমার কোন জমি-জমা না থাকায় আবাসনের মাঠে কোন রকমেই মানবেতর জীবন-যাপন করছি বাহে। বাড়ী-ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হলেও আমার কোন কষ্ট হয়নি। গত রাতে আমার মায়ের শেষ স্মৃতি হিসেবে কবরটি ছিল সেই কবরটি কেড়ে নেন আগ্রাসী ধরলা নদী। আর কোন দিন মায়ের কবরে দোয়াসহ জেয়ারত করতে পারবো না। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে বাহে !
এমন কষ্টে থাকার পরও তার সহযোগীতায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
চর-গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে ১৫ থেকে ২০
পরিবার ও হাফ কিলোমিটার সড়কসহ শতশত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষকে জানানো পর ছয় হাজার জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙন রক্ষা করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, হুমকির মুখে দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রসাসহ ওই এলাকার ৮০০ পরিবার। ভাঙন রোধের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইসমত ত্বোহা জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ছয় হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে ওই এলাকায় ভাঙন রোধ করার জন্য বড় প্রকল্প ছাড়া শুধুমাত্র জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।