সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

স্নিগ্ধ-মাহতাবের ‘হার্ব বাংলা’

আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:২৭

চারদিকে কর্মহীন মানুষ, বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা, লকডাউনে অবরুদ্ধ সবাই— কীভাবে হবে খাবারের ব্যবস্থা? ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হবার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর শুরু হয় লকডাউন। করোনার সেই ক্রান্তিকালে, প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করতে সাধারণ মানুষের যে সংগ্রাম, তা মনে দাগ কেটে যায় জাহিন মাহদি স্নিগ্ধর। ভাবতে থাকেন কীভাবে এ সমস্যা দূর করা যায়, কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখা যায়। সেই ভাবনা থেকেই ২০২০ সালের অক্টোবরে স্নিগ্ধর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘হার্ব বাংলা’। পরবর্তী সময়ে এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যুক্ত হন মাহতাব মণ্ডল।

করোনা মহামারিতে চলমান খাদ্য সংকট দূরীকরণ এবং অব্যবহৃত জায়গায় উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু হয় ‘হার্ব বাংলা’র। কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিকভাবেই কৃষি বিষয়ক জ্ঞানে ঘাটতি থাকবে। কিন্তু অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখার তাড়না স্নিগ্ধকে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী করে তোলে। তিনি জানতে পারেন হাইড্রোফনিক্স, আরএএস এবং বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে।

কিন্ত এই পদ্ধতিগুলোতে পুরোপুরি আস্থা করা গেল না কেননা, হাইড্রোপনিক বা বায়োফ্লকে উচ্চ উৎপাদনের জন্য এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয় যা ল্যাবে বানানো এবং এটা সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। অর্থাৎ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিতে যেসব খামারে এ পদ্ধতিতে ফসল উপাদান করা হয়, সেগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণে বাড়বে অথবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।

অবশেষে সমাধান পাওয়া গেল তুলনামূলক নতুন  কৃষি পদ্ধতি ‘অ্যাকুয়াফনিক্স’-এ। যেন প্রকৃতি থেকে একটা ছোট্ট স্লাইস নিয়ে এসে বাসার ছাদে বসানো হলো আর বাসার প্রোটিন ও ভিটামিনের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

মাছ আর গাছের আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতির নাম অ্যাকুয়াফনিক্স। মাছ উৎপাদনের প্রথম শর্ত পরিষ্কার অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানি। আর গাছের জন্য প্রয়োজন ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট, পানি আর সূর্যের আলো। অ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত ট্যাংক থেকে প্রথমে নোংরা পানি সংগ্রহ করা হয়। অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ এ পানি মাছের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। কিন্তু ক্ষতিকর এ পানিই আবার গাছের জন্য খুব পুষ্টিকর। এই অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানিকে যখন নুড়ি পাথর অথবা ঝামা ইটের মধ্য দিয়ে চালানো হয় তখন সেখানে থাকা নাইট্রোসোমোনাস এবং নাইট্রোজেনাস ব্যাকটেরিয়া সেই অ্যামোনিয়াকে ভেঙে নাইট্রোজেনে পরিণত করে। এ নাইট্রোজেনই গাছের উল্লেখযোগ্য মূল খাদ্য। অপরদিকে নুড়ি পাথর হয়ে যে পরিষ্কার পানি বের হয় তা ফের চলে যায় মাছের ট্যাংকে।

অর্থাৎ এ সিস্টেমে মাছ চাষ এবং গাছ উৎপাদনে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানির অপচয় রোধ করা যায়। অতিরিক্ত কোনো রাসায়নিক প্রয়োজন হয় না এবং অন্যান্য সকল কাঁচামালও সহজলভ্য। প্রথমেই শুরু হয় হার্ব বাংলার পরীক্ষামূলক বাজারজাতকরণের কাজ। এখন পর্যন্ত রংপুরের বিভিন্ন সুপার শপে প্রায় ১ টন সম-পরিমাণ রাসায়নিকবিহীন শাক-সবজি ও মাছ সরবারহ করা হয়।

২০২২ সালে ‘হার্ব বাংলা’র ‘আর্বান অর্গানিক গ্রোয়ার’ প্রোগামের যাত্রা শুরু হয়। এর আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০টি ছাদে শুরু হয় ‘কিচেন গার্ডেন’র কাজ। সম্পূর্ণ মাটিবিহীন অর্গানিক এসব  ছাদ বাগান থেকে প্রাপ্ত শাক-সবজি আর মাছের যোগান পরিবারগুলোর চাহিদার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ পর্যন্ত পূরণ করছে। আগামীতে এ প্রযুক্তির আধুনিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘হার্ব বাংলা’।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন