মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজন ‘প্যারেন্টিং কোর্স’

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৬

বলা হয়ে থাকে শিশু নাকি গর্ভে থাকার সময় থেকেই অনেককিছু শিখতে শুরু করেন।  আর পৃথিবীতে আসার পর সে তার চারপাশের পরিবেয় থেকে শিক্ষা নিতে নিতে বড় হতে থাকে। তাই শিশুর ব্যবহার কেমন হবে, মানসিকতা কেমন হবে, ভবিষ্যৎ কেমন হবে—এই সব কিছুর ওপর নির্ভর করে তার চারপাশের পরিবেশের ওপর। শিশুর বিকাশে সবচেয়ে বেশি যারা ভূমিকা রাখেন তারা হলো শিশুর মা-বাবা। মা-বাবার কোনো ভুল পদক্ষেপেই শিশুর ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 

যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কাছেই শিশুর এই অভিজ্ঞতা অর্জন বা শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি হয় এবং সন্তান প্রতিপালনে মা-বাবা সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত থাকেন, তাই এ ব্যাপারে তাঁদের সচেতন থাকা খুব জরুরি। কোন ধরনের অভিজ্ঞতা শিশুর জন্য উপযুক্ত, কী কী উপায়ে শিশুকে নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করানো যায়, কিভাবে তার সঠিক ও পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব, এসব তো প্রত্যেকেরই জানা উচিত। কিন্তু প্রত্যেকটি শিশু কি সঠিক প্যারেন্টিংয়ে বড় হয়? 

৭ বছরের শিশু নেহা বড় হয় একটি একক পরিবারে। যেখানে তার অভিভাবক শুধু তার বাবা-মা। তার জন্মের কয়েকমাসে পর থেকে  তার বাবামায়ের সম্পর্কের মধ্যে চির ধরতে শুরু করে। নেহা যখন বুঝতে শুরু করে তখন থেকেই দেখতে পায় তার বাবা-মার ঝগড়া। আর যে কারণে তারা একসঙ্গে মেয়েকে সময় দিতে পারে না। তাই একা একা বড় হতে হতে নেহার মধ্যে একগুয়েমি, বদমেজাজি ভাব চলে আসে। দিনভর মুখ গুজে থাকে। আপনমনে নিজের মধ্যে বিচরণ করে। আর তিনিও সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন না।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বর্তমানে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসাতে গিয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পারিবারিক কলহ। যার কারণে  শিশুরাও ভুগছে নানা জটিলতায়। আপনি হয়তো বা মনে করছেন, একসঙ্গে থাকলে এসব কলহ স্বাভাবিক।  কিন্তু আপনার ধারণার এই স্বাভাবিক ঘটনাই অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলতে পারে শিশুর ওপর। বাড়ির ভেতরকার পরিবেশ দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। 

পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের সঙ্গে কিভাবে কথা বলছে? কেমন আচরণ করছে? প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি জিনিস শিশুর জীবনকে প্রভাবিত করে। যদি পারিবারিক সম্প্রীতি না থাকে, দিনভর কলহ বিদ্যমান থাকে তখন আস্তে আস্তে শিশু নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে নিজের পরিবারের মধ্যেই নিজেকে আর সুরক্ষিত মনে করতে পারে না। 

অনেকসময় দেখা যায় বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের কারণ হয় সন্তান। সন্তানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঝগড়াঝাঁটি হয় বাবামাকে ঘিরে।  একসাথে বসবাস করতে হলে মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে যদি তীব্র কোনো সংঘাতের জন্ম নেয়। তবে, তা নিঃসন্দেহে শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এমন অবস্থায় সব খারাপ পরিস্থিতির জন্য শিশুটি নিজেকে দায়ী করতে থাকে। তার মধ্যে নানাধরনের দুশ্চিন্তার তৈরি হয়। এমতাবস্থায় অনেক শিশু আত্মঘাতীও হতে পারে। 

রাজধানীর হলিস্টার জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা আরবি জাহান মিতু। তার কথায়, 'আজকাল বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ডিপ্রেসড, খিটখিটে মেজাজের আবার অনেকে একদমই চুপচাপ। আমার স্কুলে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। এরা সরাসরি পরিবার থেকে প্রভাবিত হচ্ছে দেখে বা তাদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যাচ্ছে।’

বাবা-মায়ের ব্যবহার, কথাবার্তা, শিশুকে সময় দেওয়া, শিশুকে স্বাধীনভাবে অভিমত প্রকাশ করতে দেওয়াসহ আরও অনেক বিষয় আছে, যা বাবা-মায়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আয়ত্ত করে নেওয়া দরকার৷  আর এজন্যই বাবা-মায়েদের সুবিধার্থে 'প্যারেন্টিং কোর্স'- এর ব্যবস্থা করা উচিত।  তা হতে পারে বেসরকারি এনজিওগুলোতে বা সরকারি উদ্যোগও।  

শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব নিতে হবে তার পরিবারকেই। মনে রাখতে হবে পারিবারিক সম্প্রীতি যেমন শিশুকে ভালো বিকাশে সাহায্য করতে পারে ঠিক তেমনি পারিবারিক কলহ এমুহূর্তেই শেষ করতে পারে শিশুর ভবিষ্যৎ। পরিবারের যেকোনো সমস্যায়ই হোকনা কেন, তার আঁচ শিশুর গায়ে না লাগতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সন্তানদের নিরাপদ ও আনন্দময় শৈশবের জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ পরিবারের সব সদস্যের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা উচিত।

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন