স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় জেবা আর আশিকের পরিচয়, সেখান থেকেই সম্পর্কের শুরু। দুই পরিবার থেকে দুজনই ছিলো বড় সন্তান, সেদিক দিয়ে চাপ তো ছিলই! সে চাপের মাঝে আশিকের কেনা উপহার আর জেবার বুদ্ধিমত্তায় দুজনে মিলে শুরু করে জ্যাশন বিডি। যা আজ রূপ নিয়েছে ব্র্যান্ডে, দেশের লাখো মেয়ের মুখে যাদের নাম এখন ছড়িয়েছে।
মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু হয় জ্যাশন বিডির, বর্তমানে ধানমণ্ডি ও মিরপুরে ২টি শোরুমের পাশাপাশি রয়েছে একটি বিউটি পার্লার ও একটি অফিস। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ ৪০-এর অধিক কর্মীর। জ্যাশন বিডির নামকরণ নিয়ে যদি কিছু বলি Zeba থেকে Z এবং Ashiq থেকে A নিয়ে করা হয় এর নামকরণ। যা জ্যাশন বিডি দুই ফাউন্ডারের নাম।
চাকরি না পাওয়া আশিকের ভরসা ছিলো টিউশনি করানো। নিজেদের ব্র্যান্ড নিয়ে যাত্রা শুরুর আগে যেখান থেকে শুরু হয় তাদের যাত্রা, সময়টা ২০১৫ সাল। ১২০ টাকায় সাবান ও ২টি লিপস্টিক কিনে আশিক উপহার দেয় জেবাকে। অর্থসংকটে ভোগা আশিকের উপহার পেয়ে দুঃখ প্রকাশ করে জেবা, বলে উঠলো এগুলোর দাম অনেক। আশিককে দাম দেখালো ৫৮০ টাকা, যেখানে আশিক সাবান কিনেছিল মাত্র ৭০ টাকায়। এরপরই স্কিন কেয়ারের একটি পাইকারি দোকানে যায় আশিক, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের যাত্রা।
আশিক বলেন, স্কিন কেয়ার করা সম্পর্কে কিছুই বুঝতাম না। দেখতাম কত বড় বড় দোকান, কত প্রোডাক্ট, বড় বড় ইম্পোর্টার কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেতাম না। একদিন একটা দোকানে গিয়ে কিছু ছবি তুলি। তখন কোনমতে ছবি তোলা যায় এমন একটা মোবাইল ছিল। রাতে যখন ছবিগুলো জেবাকে পাঠাই সে তো অবাক, বলল এগুলো কোথায় পেলে। তখন আমি তাকে সঠিক দামগুলো বলি। জেবা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। পরের দিন আমরা দেখা করি। তখন জেবা আমাকে পেজ ও গ্রুপের কথা বলল। সেসময় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই বাজে ছিল। টাকার জন্য আমি সেমিস্টার ফি দিতে পারিনি। কোন রিলেটিভও সাহায্য করেনি। আমার কাছে এক হাজার টাকা ছিল মানিব্যাগের একবারে ভেতরে দুঃসময়ের বন্ধু। পরদিন জেবাকে নিয়ে একটি পাইকারি দোকানে যাই। সেদিন জেবার প্রথম কোনও পাইকারি দোকানে যাওয়া। তখন কিছু প্রোডাক্ট আমরা কিনি একটি করে। জেবা পরের দিন গ্রুপে কিছু প্রোডাক্টের ছবি আপলোড করে। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে যায় কোনও খবর ছিল না। মনটা একটু খারাপ হয়েছিল, কিন্তু হাল ছাড়িনি। প্রায় এক মাস পর জেবার এক বান্ধবী, নাম আঁখি- সে কিছু পণ্য কিনে আমাদের কাছ থেকে। আমরা অনেক কম লাভে তা বিক্রি করেছিলাম। তখনও পেজ খুলিনি। পেজ সম্পর্কে তেমন কিছু বুঝতাম না।
স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি একটা সময় নিজেদের হারবাল প্রোডাক্ট তৈরি করেও পেয়েছেন ভালো রিভিউ। ঢাকা শহরের নানা প্রান্তে আশিক ফ্রি ডেলিভারি করেছে, ঢাকার বাহিরে প্রোডাক্ট পাঠিয়ে পায়নি পেমেন্টের টাকা, স্বীকার হয়েছে প্রতারণার। প্রতি অর্ডার থেকে বেশি আয়ের সুযোগ থাকলেও নীতি ঠিক করে অল্প আয়েই বিক্রি করেছে পণ্য। একদিকে জেবার ফেসবুক পেজ সামলানো, অন্যদিকে রোদ কিংবা বৃষ্টিতে আশিকের ডেলিভারি করাতেই শুরু হয়েছিলো জ্যাশন বিডি, যা আজ নানা প্রতিকূলতা, বাঁধা-বিপত্তির মাঝেও নীতি নিয়ে টিকে রয়েছে।