একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধপর্বের প্রেক্ষাপটের জন্ম ২৫ শে মার্চ কালরাত্রিতে। ধ্বংসের মাঝেও প্রতিরক্ষা ও জাতীয় ঐক্যের যূথবদ্ধতায় পরিপূর্ণতা পায় ১৬ ই ডিসেম্বর। বিজয়ের দিনটি তাই বাঙালি বরাবরই জাঁকজমকভাবে উদযাপন করে থাকে। বিজয়ের আনন্দের সবচেয়ে বড় উপাদান জাতীয় পতাকা। একাত্তরে যে পতাকা আমাদের আনন্দিত করেছিল আজ সে পতাকাই আমাদের ফ্যাশন ও সাজসজ্জার প্রধান উপকরণ। দেশপ্রেম আর সম্মান জানাতে অনেকেই এদিন পতাকা হাতে রাখেন। এছাড়া হাতে থাকে জাতীয় পতাকার ব্যান্ড, মাথায় বাঁধা হয় জাতীয় পতাকার ফিতা। জাতীয় পতাকা এখন যুক্ত হয়েছে অনেকের মাস্ক হিসেবে। যা ফ্যাশনের অনুসঙ্গও বটে।
এছাড়া দেয়াল, স্কুলের আঙিনা, প্রতিষ্ঠানের অন্দর থেকে শুরু করে সবখানেই কাগজের পতাকা দিয়ে সাজানোর ধুম পড়ে। শিশুদের থাকে কাগজের পতাকার প্রতি ঝোঁক। আবার কাপড়ের পতাকার দিকেও রয়েছে আগ্রহ। রাজধানীতে কনসার্ট বা উত্সবের আয়োজনের সঙ্গে তাই এখন চলছে পতাকা বিক্রির ধুম। বাড়তি লাভের আশায় অনেক বিক্রেতাই বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করেন। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বা ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে দোকানদারদের পতাকা বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের কাছে কাগজের পতাকার চাহিদা থাকে অনেক। আবার বিভিন্ন মাপের পতাকার বিক্রিও বাড়ে। মিরপুর দশ নাম্বার গোল চত্বরে বিভিন্ন মাপের পতাকা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন আরিফ হোসেন। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে রয়েছে রিস্টব্যান্ড, ব্যান্ড, কাগজের পতাকার বান্ডিল। তিনি জানান, ‘এমনিতে আমি সবজি বিক্রি করি। দিনে কাঁচামালের ব্যবসা করে সন্ধ্যায় পতাকা বিক্রি করতে বেরিয়েছি। অনেকেই এভাবে বাড়তি লাভের আশায় পতাকা বিক্রি করছে। এখনই যা ব্যবসা। কাগজের পতাকা কদিন আগেও পাঁচ টাকা পিস ছিল। এখন ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। সবচেয়ে বড় পতাকা ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’
মাস্ক আর সিগারেট বিক্রি করতেন আলমগীর হোসেন। তিনিও তার দোকানের পাশে পতাকা বিক্রির স্ট্যান্ড করেছেন। অস্থায়ী অবশ্যই। তিনি বলেন, ‘তিনদিন ধরে পতাকা বিক্রি করছি। আজকে দেড়-দুই হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরের আগের দিন বেশি বিক্রি হয়।’
ফার্মগেটে গেলে এমন অনেককেই দেখা যায়। ৩৬ বছর বয়স্ক জিয়া আহমেদ জানান, ‘আগে ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। এই সপ্তাহ পতাকা বিক্রি করবো। লাভও একটু বেশি হবে। প্রতি বছরই বিক্রি করি।
রাজধানীর নিউমার্কেটে পতাকা কিনতে এসেছেন ওমায়ের আহমেদ জুমার, তিনি বলেন, ‘এলাকায় ফাংশন রয়েছে। তাই পতাকা কিনছি। এখানে অনেক ধরনের পতাকা আছে।’ দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায়ও পতাকা বিক্রি হচ্ছে। মূলত সাইজ অনুযায়ী এগুলো বিক্রি নির্ধারণ হয়। বর্তমানে ছোট পতাকা ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৫ টাকা, ১০ ফুটের পতাকা ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০ টাকা, ৬ ফুটের পতাকা ৩০০-৩৫০ টাকা, যা আগে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হতো। ১৫-২০ ফুটের পতাকা আগে অর্ডার দিতে হয়। নিউ মার্কেটের পতাকা বিক্রেতা রহমত জানান, ‘পাইকারি ১ ফুটের পতাকা প্রতি পিস ১০ টাকা, দেড় ফুটের পতাকা পিস ১৮ টাকা, আড়াই ফুট ৩৫ টাকা, সাড়ে ৩ ফুট ৪৫ টাকা পিস বিক্রি করি। দু-একটা পতাকা বিক্রি করি না। আর কেউ কিনতেও চায় না। পাইকারি কমপক্ষে ১০০ টা নিলেই তবে বিক্রি করি।’