শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

সিংড়া উপজেলা নির্বাচন

চোখে ঝাপসা দেখছেন অপহৃত প্রার্থী দেলোয়ার

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ২১:২৪

প্রথমে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। এরপর সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তবে এখনো দুই চোখে ঝাপসা দেখছেন অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে তার চোখের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। 

সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গত সোমবার বিকালে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণের শিকার হন দেলোয়ার। এর আগে একই দিন দুপুরে তার দুই ভাইকে অপহরণ করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের লোকজন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুই অভিযুক্ত গ্রেপ্তার করে আদালতে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এক আসামি জবানবন্দি দিয়ে অপহরণের ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম উল্লেখ করেছেন। তবে নতুন করে সেসব আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

তবে পুলিশ বলছে, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ায় অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ জন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

সোমবার বিকালে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবীবের ঘনিষ্টরা। ঘণ্টাখানেক পর সিংড়ার সাঐল গ্রামে নিজের বাড়ির সামনে দেলোয়ারকে অচেতন অবস্থায় ফেলা যায় অপহরণকারীরা। ওই দিন রাতেই মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দেলোয়ারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবীড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রার্থীর ভাই মুজাহিদ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দুই অভিযুক্তকে সেই রাতেই গ্রেপ্তার করে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে আছেন মামলার বাদী মুজাহিদ আলী। মুজাহিদ আলী মোবাইল ফোনে বলেন, নিবীড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে বের করার পর থেকেই তার ভাই কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। চোখের ওপরে ঘুসি মারায় চোখ ফুলে গেছে। তীব্র ব্যথা করছে। দুই চোখে এখনো ঝাপসা দেখছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চিকিৎসকরা চোখের চিকিৎসা শুরু করেছেন। পরিপূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছু দিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

নাটোর সদর থানা সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের মামলায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হক বাবু ও সুমন আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন সুমন। জবানবন্দিতে সমুন আহমেদ প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়ে দেলোয়ারকে অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নামও প্রকাশ করেছেন। 

মামলার বাদী মুজাহিদ আলী বলেন, অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ হওয়ার পরও ঘটনার চার দিনে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অপহরণে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসটির চালক ও মালিক শনাক্ত হলেও তাদের আটক বা মাইক্রোবাসটি এখনো জব্দ হয়নি। তা ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে ১৩ দুর্বৃত্তের নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে এলেও তারাও গ্রেপ্তার হননি। 

নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, দিনেদুপুরে অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে চিহ্নিত আসামিরা ঘটনার দিন থেকে আত্মগোপন করেছেন। এ জন্য আসামিদের আটক করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছেন। তা ছাড়া অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও খুঁজছে পুলিশ। সন্ধান পাওয়া মাত্র সেটি জব্দ করা হবে।

নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ বলেন, অপহরণের শিকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মুনয়েম হোসেন লুৎফুল হাবীবের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে দরখাস্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনে। ইতিমধ্যেই লুৎফুল হাবীবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে কমিশন। এ ছাড়া অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বিষয়টি তার (নির্বাচন কর্মকর্তা) কাছে পাঠানো হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বা জরিমানা করতে পারে।

ইত্তেফাক/পিও