জেলাজুড়ে ১৮ হাজার খামারে প্রস্তুত করা হচ্ছে কুরবানির পশু। শেষ সময়ে মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরিচর্যাসহ নানামুখী ব্যস্ততায় রয়েছেন খামারিরা। নাটোরের এসব খামারে চাহিদার তুলনায় কুরবানির জন্য দ্বিগুণ পশু মজুত রয়েছে।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে স্থানীয় হাটে তোলা হবে খামারে প্রস্তুত এসব পশু। অতিরিক্ত পশু নেওয়া হবে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন হাটে। খামারিদের ভাষ্যমতে, দূর-দূরান্তের ব্যাপারীরা চাষিদের খামারে এসেও পশু কিনে রাজধানীসহ দেশের ভিবিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করবেন।
নাটোর জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের হিসেব মতে, জেলাজুড়ে ১৮ হাজার খামার রয়েছে। এসব খামারে ৪ লাখ ৭৮ হাজার গরু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নাটোরের স্থানীয় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত পশু উচ্চ মূল্যে বিক্রির জন্য খামারি এবং স্থানীয় ব্যাপারীরা শহরমুখি হবেন।
প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, এই এলাকায় শুধু যে গরু পালন হচ্ছে তা নয়। নাটোরের খামারগুলোতে গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়ার পাশাপাশি দুম্বা এবং গারল প্রজাতির পশুও কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
খামারিদের ভাষ্যমতে, কুরবানির জন্য নাটোরে গরুর প্রচলন সবচেয়ে বেশি। এ কারণে এই অঞ্চলের খামারিরা গরু পালনে বেশি আগ্রহী। কিন্তু গো-খাদ্য থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার চড়া হওয়ায় চলতি বছর গরু পালনে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি খরচ গুনতে হয়েছে খামারিদের।
গরু ব্যবসায়ীরা মনে করেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অবৈধ পথে গরু এলেই দেশের বাজারে স্থানীয় গরুর চাহিদা আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এতে খামারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। প্রতি বছরই একটি সিন্ডিকেট চক্র বিদেশি গরু আমদানি করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেন। এতে করে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় গরু অবিক্রিত থাকে। ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হয় দেশিয় খামারি এবং ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের। কুরবানির আগে অবৈধ পথে গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে গরু বিক্রি করে মোটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি বাড়বে গরু পালনের চাহিদাও।
খামারি আবুল কালাম ইত্তেফাককে বলেন, তিনি দুই দশকের পুড়নো খামারি। কুরবানি ঈদে বিক্রির জন্য তিনি প্রতি বছরই গরু পালন করেন। এবছরও তার খামারে ১৩ থেকে ১৫ মণ ওজনের ১১টি গরু রয়েছে। এসব গরু মোটাতাজা করণে তিনি জন্ম নিরোধক বড়িসহ বাজারের অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করেন না। প্রতিটি গরুতে তার অন্তত ৪০০ টাকার দেশীয় খাদ্যের যোগান দিতে হয়। সঙ্গে শ্রমিক খরচসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চমূল্যে গরু পালনের পরও গত কুরবানির ঈদে তার ৩টি গরু অবিক্রিত ছিল। মূলত অবৈধ পথে বিদেশি গরু আমদানি বন্ধ হলে দেশিয় বাজারে কাঙ্খিত মূল্যে পাবেন তারা। এতে তার ১১টি গরুতে অন্তত ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিক্রি নামবে।
আয়নাল হক, ঝন্টু মিয়া, খয়বর আলী, জামিরুল ইসলামসহ অন্তত বিশজন খামারি ইত্তেফাককে জানান, কুরবানি ঘনিয়ে আসায় খড়, ভূসি, চালের খুদ, কাঁচা ঘাসসহ দানাদার বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তাদের খামারে পালন করা হচ্ছে ফ্রিজিয়ান, শাহীওল শংকর ও দেশীয়সহ বেশ কয়েকটি জাতের গরু। সুঠাম দেহের ওজনদার এসব গরু দেখতে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এরই মধ্যে বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের খামার থেকে গরু কিনে খামারেই রেখে গেছেন কুরবানিতে বিক্রির জন্য।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, নাটোরে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু রয়েছে। গরুগুলোর স্বাস্থ্য এবং খাবার রুচি ঠিক রাখতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদেশি গরু আমদানি না হলে এবছর দেশিয় গরু বিক্রি করে ব্যপক লাভবান হবেন খামারিরা।