মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কয়েকশ বস্তা সরকারি চাল ও টিসিবি পণ্য উদ্ধার শিক্ষার্থীদের

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮

ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের বাজার মনিটরিংয়ে এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক গোডাউনে মিলেছে ‘খাদ্য অধিদপ্তর’ লেখা শত শত বস্তা চাল ও টিসিবির পণ্য। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওএমএস এর আটা মিলেছে ওই ব্যবসায়ীর আরেকটি গোডাউনে। খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে চারটি গোডাউন সিলগালা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী কমিশনার) আবুজর মো. ইজাজুল হক।
 
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকালে শহরের টেপাখোলা বাজারের ব্যবসায়ী ও বর্ষা অটোরাইস মিলের স্বত্ত্বাধিকারী মোসলেম বিশ্বাসের ব্যক্তিগত চারটি গোডাউনে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর আগে ওই বাজারে মনিটরিং করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারকে অবগত করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে পাঠান। 

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এখানে বাজার মনিটরিং করছিলেন। এ সময় আমাদের কাছে খবর আসে খাদ্য অধিদপ্তরের সিল সম্বলিত একটি চালের বস্তা রয়েছে। বিষয়টি জেনে এখানে এলে ব্যবসায়ী বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন আমাদের। পরবর্তীতে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আমরা অবগত করি। 

এই শিক্ষার্থী বলেন, চাউলের বাজারমূল্য বেশির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন, গুদাম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই মূলত চালের দাম বেড়ে থাকে। আমরা বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। আজকের এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জেলা খাদ্য নিরাপদ কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে, যা তার আচরণে প্রতীয়মাণ হয়েছে। 
 
অভিযোগ উঠেছে, খবর পেয়ে সেখানে আগে ছুটে যান জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) বজলুর রশিদ। তিনি শিক্ষার্থীদের জানান জেলা প্রশাসক পাঠিয়েছেন। এ সময় তিনি কাগজপত্র না দেখেই সকল কিছু বৈধ আছে বলে শিক্ষার্থীদের এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়লে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে চারটি গোডাউন সিলগালা করেন। জানা যায়, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা বজলুর রশিদ ওই ব্যবসায়ীর ছোট ভাইয়ের মেয়ের জামাতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ীর ৫/৬টি গোডাউন রয়েছে ওই এলাকায়। যার একটি গোডাউনে শতাধিক বস্তা চাল রয়েছে। যার প্রতিটি বস্তায় লেখা রয়েছে ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য’। এ সময় সেখানে টিসিবির পণ্য লেখা আরও ৯টি বস্তায় ডাল পাওয়া যায়। একইভাবে লেখা আরেকটি গোডাউনেও চালের সন্ধান মিলে। যার প্রতিটি বস্তায় সরকারি গোডাউনের চাল রয়েছে। অপর একটি গোডাউনে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য চিনিও পাওয়া যায়। এছাড়া আরও একটি গোডাউনে ওএমএস লেখা শতাধিক বস্তা আটা দেখা যায়, যা মেয়াদউত্তীর্ণ ছিল। 

তবে এসব বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী দাবি করে বলেন, তার ব্যক্তিগত মিল থেকে চালগুলো বস্তায় ভরা হয়েছে এবং বস্তাগুলো খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ক্রয় করা হয়েছে। 
তিনি আরও দাবি করেন, পুলিশের রেশনের চাল-ডাল তিনি ক্রয় করে থাকেন এবং ওএমএসের পণ্য বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু টিসিবির পণ্যের বিষয়ে সদুত্তোর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি জেনেছি এবং কয়েকটি গোডাউন সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া ওই ব্যবসায়ীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইত্তেফাক/এসজেড
 
unib