মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে গবেষণা করুক: মাভাবিপ্রবি ভিসি

 

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:০৯

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। তিনি দেশসেরা গবেষকদের মধ্যে অন্যতম এবং পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার ভাবনা ও আগামী পরিকল্পনা নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি লিপিবদ্ধ করেছেন শেখ সায়মন পারভেজ।

ইত্তেফাক: মাওলানা ভাসানীর স্বপ্নের লালিত ক্যাম্পাসে উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় দৈনিক ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

উপাচার্য: দৈনিক ইত্তেফাককে ধন্যবাদ।

ইত্তেফাক: উপাচার্যের মতো একটি গুরুদায়িত্বে যোগদানের পর প্রাথমিক ধাপে কোন বিষয়টির ওপর আপনি সর্বপ্রথম গুরুত্বারোপ করছেন?

উপাচার্য: এই ক্যাম্পাসে আমি আগেও পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে এসেছি, তাই এই ক্যাম্পাস আমার কাছে অপরিচিত নয়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে নিয়ম প্রতিষ্ঠার একটি ধারা বইছে, এবং আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি। যোগদানের পরপরই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে বসেছি এবং তাদের কথা শুনেছি। তারপর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য সিরিজ মিটিং করেছি। মূলত, আমি সর্বপ্রথম ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

ইত্তেফাক: আপনি দেশসেরা গবেষকদের একজন। শিক্ষার্থীদের গবেষণার উন্নয়নে আপনার ভাবনা কী?

উপাচার্য: উন্নতমানের গবেষণার জন্য কেবল ক্লাসরুম নয়, উন্নত মানের গবেষণাগারও প্রয়োজন। আমরা ধাপে ধাপে এটি নিশ্চিত করব। আমি চাই আমার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে গবেষণা করুক, যাতে দেশের সমস্যাগুলোর সমাধানে তা কাজে লাগে। ফান্ডিং একটি বড় বিষয়। এজন্য আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে একাডেমিয়ার একটি আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করব, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি আমাদের ফান্ডিং দেবে, আর আমরা তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। এভাবে গবেষণায় ফান্ডিংয়ের সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে। সরকার থেকেও কিছু ফান্ডিং পাচ্ছি, তবে ফান্ডিং বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারকে আরও উদ্বুদ্ধ করব।

ইত্তেফাক: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার আদর্শিক চর্চা ও মূল্যায়নে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

উপাচার্য: আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে হয়েছে। তিনি সারাজীবন নিপীড়িত মানুষের পাশে ছিলেন এবং সত্য, ন্যায়, মানবতা ও প্রজ্ঞার আদর্শ লালন করেছেন। তার এই আদর্শ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ক্যাম্পাসে 'ভাসানী স্টাডিজ' নামে একটি কোর্স পড়ানো হয়। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের তার আদর্শবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমার প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট থাকবে।

ইত্তেফাক: আপনি সাহিত্য অনুরাগী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুণাবলী বিকাশের ব্যাপারে আপনার ভাবনা কী?

উপাচার্য: দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারি। আমি মনে করি, পড়াশোনা ও গবেষণার চাপে শিক্ষার্থীদের মাঝে একঘেয়েমি তৈরি হতে পারে। একঘেয়েমি দূর করতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্লাবের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে যুক্ত হওয়া উচিত। পছন্দ অনুযায়ী সবাই যেন কোনো না কোনো এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত হয়। ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যাপারেও আমরা সচেষ্ট থাকব।

ইত্তেফাক: শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসন ও একাডেমিক কার্যক্রমের মানোন্নয়নে আপনি কী কী পদক্ষেপ নেবেন?

উপাচার্য: কয়েকদিন আগেই এ বিষয়ে একটি মিটিং করেছি। গত আন্দোলনের কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট তৈরি হয়েছে। আমাদের এখানে সেমিস্টার হয় ৬ মাস অর্থাৎ ১৪ সপ্তাহে, তবে আগামী সেমিস্টার ১২ সপ্তাহে হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী সেমিস্টারগুলোতেও সপ্তাহ কমাবো, তবে সিলেবাস কমাবো না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ একটু বেশি নিতে হবে। অন্যদিকে, পড়াশোনার মান কীভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করব।

ইত্তেফাক: একজন উপাচার্য তথা প্রাতিষ্ঠানিক অভিভাবক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?

উপাচার্য: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পরিবারের সান্নিধ্য ছেড়ে নতুন এক পরিবেশে আসে। তখন নতুন পরিবেশ কিংবা বন্ধুদের প্রভাবে অনেকে নেশাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের উচিত পড়াশোনার বাইরে অবসর সময় এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে ব্যয় করা। আমি আশা করি, শিক্ষার্থীরা জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময় সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারবে।

ইত্তেফাক: দৈনিক ইত্তেফাককে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

উপাচার্য: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

ইত্তেফাক/এসএএস