বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

যশোর বোর্ডে অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত, মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষকদের

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ২১:২২

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ড যশোরের অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (৮ মে) বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মতিন সাক্ষরিত অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বোর্ডসংশ্লিষ্ঠরা বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বোর্ডটিতে দেশে প্রথম শুরু হওয়া প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্নব্যাংকের কারণে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হচ্ছে। মূলবই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইড নির্ভরতা কমেছে। এমনকি অভিন্ন এই প্রশ্নে প্রাকনির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়াতে দুবার দেশ সেরা বোর্ডে সাফল্য ধরা দিয়েছিল এসএসসিতে।
  
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো যশোর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য স্কুলপর্যায়ে শক্তিশালী একটা উদ্যোগ নেয়। সেটা হলো নিজস্ব প্রশ্ন ব্যাংক। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বাছাইকৃত দক্ষ শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে প্রশ্নব্যাংকে জমা দেন। ঐ শিক্ষকরাই আবার তা মডারেট করেন। পরে মডারেট করা প্রশ্নপত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত হয়। এর প্রভাব পড়ে বোর্ড পরীক্ষায়। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়াতেই স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু  বৃহস্পতিবার বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস আদেশে বন্ধ হয় অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম। 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে: স্ব স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (পাবলিক পরীক্ষা ব্যতীত) নিজেরাই প্রণয়ন করবেন। কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত থাকায় যশোর শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত প্রশ্নব্যাংকের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে, শিক্ষাবোর্ডের এই কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে। পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন অনেকেই। যশোর সদরের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ মাসুদ বলেন, আসলে বোর্ডের প্রশ্ন ব্যাংকে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। ১০ জেলার সেরা শিক্ষক দিয়ে এই প্রশ্ন করা হতো। এতে মূলবই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইড নির্ভরতা কমেছিল শিক্ষার্থীদের ভিতর।

তিনি বলেন, অনেক মফস্বলের শিক্ষার্থীরা কোনো ক্যাডেট বা জিলা স্কুলের মতো শিক্ষকদের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতো। সেই কারণে তারা সেইসব নামীদামী স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতোই গড়ে উঠতো। এছাড়া শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরে দক্ষ হয়েছিল। পরীক্ষার কিছু সময় আগে বোর্ড অনলাইনে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয়ায় ফাঁসের ঝুঁকি বা প্রবণতাও কমে গেছে। এই উদ্যোগটা আমার কাছে ভালোই ছিল।

যশোর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএম জহুরুল পারভেজ জানান, প্রশ্ন ব্যাংকের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে শিক্ষা বোর্ড। সেই টাকায় দুর্নীতি করেছে। এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেবে। প্রশ্ন তৈরি করতে শিক্ষকদের বই পড়তে হবে। এতে করে শিক্ষকরা মানসম্মত প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন। হঠাৎ পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়াতে কিছুটা সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে এটা স্বাভাবিক হবে।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন বলেন, এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি। একমাত্র যশোর বোর্ডই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করতো। এটা আসলেই নান্দনিক উদ্যোগ ছিল। প্রশ্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সেরা সেরা শিক্ষকেরা প্রশ্ন করতেন। এতে অজপাড়াগাঁর শিক্ষার্থীরাও ভালো শিক্ষক ও ভালো মানের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতো।  এটা থেকে উপকৃত হতো শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকেরা। এখন প্রশ্ন ব্যাংক বন্ধ হওয়াতে উপকৃত হবে গাইড ব্যবসায়ীরা।

টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। শুনেছি ১০ টাকা করে দেওয়া হতো। সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।’

ইত্তেফাক/এসএ/এসএএস