শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তনু হত্যার বিচার কি পাব না?

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৭

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান ওরফে তনুর বাবা-মায়ের প্রশ্ন—‘আমরা কী তনু হত্যার বিচার পাব না ? ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলার মতো তদন্ত ও রায় কী আমরা দেখে যেতে পারব না ? তনুর লাশ উদ্ধারের পর ৩ বছর ৮ মাস পার হলো, কিন্তু           এখনো এ মামলার তদন্তই শেষ হচ্ছে না। তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল হলেও এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাও উদ্ঘাটন হয়নি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তনু হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।’ মঙ্গলবার বিকালে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের নিকট এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

এদিকে তনুর খুনিরা এখনো চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার, স্বজন, সহপাঠী, প্রতিবাদী মহল ও জেলার বিশিষ্টজনেরা। তারা অবিলম্বে তনুর খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। 

কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের প্রায় ৩০ গজ পশ্চিমের একটি জঙ্গল থেকে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে আমি খুশি। আমিও চাই আমার মেয়ে হত্যা মামলার রায় এমনই হোক।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোনো খোঁজ রাখেন না। আমরা গরিব, অসহায় মানুষ। আমাদের কথা কে শুনবে?’ তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা অসহায় হওয়ায় আমাদের মামলা নড়ে না, অপরাধীও শনাক্ত হয় না। আল্লাহ যদি সহায় হন, তবে একদিন সরকার বিচার করবে। সেই আশা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। সিআইডিও কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না।’ তনুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তনুর লাশ উদ্ধারের পরের দিন বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতয়ালি মডেল থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলামকে। ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ওসি এ কে এম মনজুর আলমকে। একই বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডি কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। তবে ঐ বছরের ১৬ মে তনুর পোশাকে পাওয়া শুক্রাণু পরীক্ষা করে তিন জনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে সিআইডি জানায়। এরপর তনুর পোশাকে পাওয়া তিনটি ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজন কয়েক জন ব্যক্তির ডিএনএ মেলানো হয়। এতে কোনো ফল আসেনি। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েক জনের সঙ্গে ডিএনএ মেলানোর উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে তনুর নাট্য সংগঠনের ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের পাঁচ জন নাট্যকর্মীর সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ডিএনএ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। সেটি ঢাকায় ল্যাবে আছে। মামলার তদন্ত থেমে নেই। তদন্ত কাজে তনুর বাবা-মা, কিংবা যখনই যাকে প্রয়োজন হবে তখনই তাদের সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব।’

এদিকে চোখের পানি ফেলে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন জানান, ‘বুধবার (আজ) তনু হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর ৮ মাস পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষ্যে তনুর কবর জিয়ারত করা হবে এবং তার জন্য দোয়া ও মিলাদ পড়ানো হবে।’