শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্মৃতিরা আর ফিরবে না গৌরীপুর সরকারি কলেজে

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২০, ১৮:৫৭

ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজে প্রাচীন স্থাপনা (পাকাভবন) ভেঙে পাঠদান ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ওই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসাবে জমিদার আমলের এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার পরিবর্তে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

১৯৬৪ সালের ১ আগস্ট গৌরীপুর পৌর শহরের কৃষ্ণপুর এলাকায় জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ীর দৃষ্টিনন্দন বাড়িতে স্থাপিত হয় গৌরীপুর সরকারি কলেজ। কলেজটিতে রয়েছে ২২ একর সম্পত্তি। দৃষ্টিনন্দন বাড়িটিতে স্থাপিত কলেজটি প্রাচীন নির্দশন, সুপ্রশস্ত মনোরম ক্যাম্পাস ও প্রাকৃতি পরিবেশের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠটি ক্রমেই দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়।

১৯৯১ সালে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ২০১২ সালে কলেজে অর্নাস কোর্স চালু হয়। এই অবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে দেখা দেয়ে ভবন সঙ্কট। সম্প্রতি কলেজে ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রাচীন স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরে স্থাপনা ভাঙার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। কলেজে বিকল্প জায়গা থাকার পরেও কেন প্রাচীন নির্দশন ভেঙে ভবন নির্মাণ হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বুধবার বিকালে গৌরীপুর সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষ ভবনের পাশে প্রাচীন স্থাপনাটি ভাঙার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে একতলা ছাদবিশিষ্ট স্থাপনাটির ওপরের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, পর্যায়ক্রমে বাকি অংশ ভাঙা হবে। 

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ীর বাড়ির দরবারখানা হিসেবে ব্যবহৃত প্রাচীন স্থাপনাটিতে গৌরীপুর কলেজের ছাত্র সংসদের কার্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কমন রুম হিসাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্ত ভবন নির্মাণের অজুহাতে স্থাপনাটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। 

উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক হারুনআল বারী বলেন, একাধিক ভবন নির্মাণের জন্য গৌরীপুর সরকারি কলেজের নিজস্ব অনেক জমি খালি পড়ে রয়েছে। আমাদের দাবি ওইসব খালি জমিতে ভবন নির্মাণ করা হোক। পাশাপাশি ঐহিতহাসিক নির্দশনটি না ভেঙে এর অবকাঠামো ঠিক রেখে দৃষ্টিনন্দন ভাবে সংস্কার করা হোক।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অপরিকল্পত সংস্কার ও নির্মাণ কাজের জন্য কলেজের প্রাচীন নির্দশনগুলো ধ্বংস হচ্ছে। কয়েক বছর আগে সংষ্কারের নামে কলেজের প্রবেশ পথে প্রাচীন ভবনের ওপরিভাগের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সেটি মেরামত হয়নি। এখন আরেকটি প্রাচীন স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে কলেজের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

এ বিষয়ে গৌরীপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মিল্টন ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, স্থাপনাটির অবকাঠামো দুর্বল ও ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ায় এটি সংস্কার করে সংরক্ষণের সুযোগ নেই। স্থাপনাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়ে ছিলো। তাই ভবন নির্মাণের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এটি ভাঙা হচ্ছে। তবে কলেজের যে সকল প্রাচীন নির্দশন সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো আমরা সংস্কার করে সংরক্ষণ করছি।   

ইত্তেফাক/এসি