শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খালিয়াজুরীতে আফাল দুর্যোগে ভাঙছে ৬০ গ্রাম

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৫৮

নেত্রকোনার হাওর দ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলায় ‘আফাল’ দুর্যোগে এবারের বর্ষায়ও ভাঙছে অন্তত ৬০টি গ্রাম। বর্ষা মৌসুমের ঝড়ো হাওয়ায় উন্মুক্ত জলরাশির মাঝে সৃষ্ট উন্মাতাল ঢেউয়ের তাণ্ডবকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় আফাল।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছরই আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত হাওর পাড়ের এ উপজেলাটিতে প্রায়শই দেখা দেয় আফাল দুর্যোগ। আফাল দুর্যোগে বিগত কয়েক দশকে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে খালিয়াজুরীর ২০টি গ্রাম।

বিলীন হওয়া গ্রামসমূহ হচ্ছে-জগদীশপুর, মাগনপুর, বিক্রমপুর, কানাইনগর, সুলতানপুর, আমীনপুর, খুরশীগঞ্জ, কালিপুর, হেমনগর, আছানপুর, নূরপুর, কাচারীবাড়ি, হাবিবপুর, দুর্গাবাড়ি, নগর, শিবপুর, কামারবাড়ি, নরসিংহপুর, নয়ানগর, সওতাল গ্রাম। প্রাচীন মানচিত্রে ও ভূমি রেকর্ডে এ গ্রামগুলোর নাম উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তা এখন আর নেই।

খালিয়াজুরী হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি স্বাগত সরকার শুভ জানান, ওই গ্রামসমূহ বিলীনের সময় যতটা প্রবল গতিতে আফাল তাণ্ডব হতো ঠিক ততটা না হলেও এর কাছাকাছি গতিতে এবারও খালিয়াজুরীর অন্তত ৬০টি গ্রামে চলছে এ তাণ্ডব। চলতি মাসে বয়ে চলা এ তাণ্ডববলীলার শিকার হচ্ছে উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, নাজিরপুর, মুরাদপুর, শ্যামপুর, কুতুবপুর, কল্যাণপুর, বেরীদৌলতপুর, বেরীমুসলিমপুর, জাহেরপুর, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, গছিখাই, চানপুর, যোগীমারা, আদাউড়া, রোয়াইল, প্রসাদপুর, আমানীপুর, মুজিবনগর, চাকুয়া ইউনিয়নের চাকুয়া, বল্লী, পাতরা, মুকিমপুর, মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নথাপুর, নূরালীপুর, বিলবিল্লাহ, নগর ইউনিয়নের আদমপুর, নয়াগাঁও, বল্লভপুর, বাঘাটিয়া, হায়াৎপুর, খোশালপুর, গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর, মেওয়াতলী, পাচঁহাট, চরপাড়াসহ ৬০টি গ্রাম। আফালের শিকার এসব গ্রামের মানুষের দিন কাটছে এখন আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মাঝে।

আরও পড়ুন: বলাৎকারের ভিডিও ধারণ করে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা দাবি, যুবক আটক

কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামিম মিয়া বলেন, এবারের বর্ষায় আফাল তাণ্ডবে ইউনিয়নটিতে গ্রাম ভাঙন ছাড়াও কৃষ্ণপুর ঈদগাঁ মাঠ থেকে কুতুবপুর পর্যন্ত রাস্তা ভেঙে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার। এখানে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষা প্রাচীর ভেঙে।

এ ইউনিয়নটির মতো আফাল দুর্যোগের কবলে রয়েছে খালিয়াজুরীর অন্য ৫টি ইউনিয়নেরও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অসংখ্য স্থাপনা।

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট খালিয়াজুরী ত্রাণ কার্যালয়’র প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব আহমেদ জানান, এ উপজেলায় ৮৫টি গ্রামের মধ্যে ৬০টি গ্রামই আফাল তাণ্ডবের শিকার। এর মধ্যে অধিকতর তীব্র গতিতে ভাঙছে ৫০টি গ্রাম।

স্থানীয় এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনূস আলী জানান, ভাঙন ঠেকাতে এসব গ্রামে সিঙ্গেলস-সিমেন্টে তৈরি ব্লক দিয়ে স্লুপ করে প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করাটাই হবে যুগোপযোগী কাজ। ব্লকের মাধ্যমে প্রাচীর নির্মিত হলে গ্রাম সম্প্রসারণ কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে তা সহজে স্থানান্তরও করা যাবে।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, আফাল তাণ্ডবে ভাঙছে এমন গ্রামগুলোকে চিহ্নিত করে তা মেরামত এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, সর্বনাশা আফাল দুর্যোগের শিকার হওয়া  এখানকার অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র ও কৃষি নির্ভর। প্রতি বছরই তাদের কষ্টার্জিত কৃষি আয়ের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা তারা ব্যয় করেন আফাল তাণ্ডবের কবল থেকে ঘর-বাড়ি রক্ষার জন্য বাঁশ, চাটাই কিংবা অন্যান্য উপকরণ কিনে।

তাই তাদের এ ব্যয় ও দুর্দশা ঘুচানোর লক্ষে আর মানবিক বিবেচনায় অবিলম্বে এখানকার গ্রাম প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলকে এগিয়ে আসার অনুরোধও জানাচ্ছেন তিনি। 

ইত্তেফাক/এএএম