শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নির্যাতনের শিকার তানিয়া তিন সন্তান নিয়ে বিচারের আশায়

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০১৯, ২০:১৫

যৌতুকলোভী স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির অমানবিক অত্যাচার এবং নির্যাতনের শিকার তানিয়া(২১)। তিনি ফুটফুটে তিন শিশু সন্তান নিয়ে ন্যায় বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাপের বাড়ি এসে অর্থের অভাবে তিন শিশু সন্তানকে লালন পালন করতে না পেরে চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন অসহায় তানিয়া। পুলিশের কাছে আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে এমনকি মামলাও করতে পারছেন না।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়নের উত্তর পেকুয়া গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার উত্তর পেকুয়া গ্রামে তানিয়ার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

তানিয়ার অসহায় দিনমজুর পিতা কাদের মিয়া (৪৫) ও মাতা সুমলা বেগম (৩৫) জানান, ২০১১ সালে নভেম্বর মাসে মির্জাপুর উপজেলার ১০ নং গোড়াই ইউনিয়নের বাইমাইল দক্ষিনপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর ওরফে সুর্য মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসানের (২৬) সঙ্গে তানিয়ার বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বিয়ের সময় মোটা অংকের যৌতুকও দেওয়া হয় হাসানের পরিবারকে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তানিয়ার ওপর অমানবিক অত্যাচার আর নির্যাতন। বিদেশ যাবে এই বলে তানিয়াকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে যৌতুক লোভী হাসান। ধারদেনা করে জামাইয়ের হাতে আবার মোটা অংকের টাকা তুলে দেয় তানিয়ার বাবা মা। কিন্ত সে টাকা নিয়ে বিদেশে না গিয়ে বাবা মায়ের সংসারে ও বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে খরচ করে ফেলে বখাটে মেহেদী হাসান।

এদিকে তানিয়ার কোলে মেহেরুন, মরিয়ম ও মনি ওরফে মর্জিনা নামে ফুটফুটে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তিন কন্যা সন্তান সংসারে আসার পর তানিয়ার ওপর নেমে আসে অন্ধকার। যৌতুকের জন্য প্রায়দিন চলতো অত্যাচার নির্যাতন। স্বামী মেহেদী হাসানের সঙ্গে অত্যাচার নির্যাতনে যোগ দেন তার শ্বশুর সবুর মিয়া ওরফে সুর্য মিয়া ও শাশুড়ি ছকিনা বেগম। স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিক বিচার-শালিসও হয়েছে। তারপরও তানিয়ার ওপর অত্যাচার নির্যাতন কমেনি। সর্বশেষ গত সোমবার তানিয়ার ওপর নির্যাতন চালায় মেহেদী ও তার বাবা মা। তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীর জখম ও রক্তাক্ত করে তিন শিশু সন্তানসহ বিতাড়িত করে দেয়। আশপাশের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এখন ন্যায় বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তানিয়া।

এ ব্যাপারে যৌতুকলোভী তানিয়ার স্বামী মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে বলে, ‘আমার মাথা ঠিক ছিল না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহের এক পর্যায়ে তানিয়াকে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনা মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনঃ গৌরনদীতে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেলো তিন কিশোরী

এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম মিজানুল হক মিজান বলেন, ‘তানিয়ার নির্যাতনের বিষয়টি তার জানা নেই। এখন পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইত্তেফাক/নূহু