শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টানা বর্ষণে বেড়েছে দুর্ভোগ, রোহিঙ্গা শিবিরে পানিবাহিত রোগের আশংকা

আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৬

কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েক হাজার শরণার্থীর আশ্রয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে এ বিশাল জনগোষ্ঠীর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বাড়ছে। ৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলমান মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছরের তুলনায় বেশি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির আশংকা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আইওএমের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদের পাঠানো এক তথ্য বিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জরুরি সাহায্য প্রদান করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। গত দুই দিনে প্রায় ৬ হাজার আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেছে সংস্থাটি। 

আইওএম-বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ক্যাম্পে অবর্ণনীয় দুর্দশা বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জরুরি সাহায্য প্রদান ও তাদের পুনরায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য দিন-রাত কাজ করছে আমাদের সবগুলো টিম। আমরা দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষতি কাটানোর জন্য কাজ করলেও আমাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইওএম গত দুইদিনে (৯ এবং ১০ জুলাই) প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি সাহায্য প্রদান করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ মানুষকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি, এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি এই অঞ্চলের মানুষকে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এখনো মৌসুমের অর্ধেক সময় পার করছি।’

আইওএমের হিসাব অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘন্টায় আইওএমের ক্যাম্পে থাকা টিমগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় ৫ হাজার ৭৯ টি প্লাস্টিক তেরপল বিতরণ করেছে। কুতুপালং মেগাক্যাম্প এলাকায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আইওএম এবং এর পার্টনার সংস্থাগুলো চলমান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনমত তাৎক্ষণিক সাহায্য করছে। ১১ জুলাই সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। ফলে ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু এবং নালা-নর্দমার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশংকা করছেন আইওএম এর প্রকৌশলীরা।

গত ৯ জুলাই রাত থেকে ১০ জুলাই রাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৯৯৮ জন মানুষ এবং ৯১২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইওএমের টিমগুলো গত ২৪ ঘন্টায় মোট ৬টি মাটি ধ্বস, ৮ বার ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত এবং ১৭৪ জন মানুষ গৃহহীন হওয়ার খবর রেকর্ড করেছে।

আরও পড়ুন: কসবায় শিশু ধর্ষণচেষ্টার অপরাধে মাদ্রাসার শিক্ষক গ্রেফতার

আইএসসিজি (ইন্টার সেক্টর কোর্ডিনেশন গ্রুপ) বলছে মৌসুমী দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে এ বছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৮ সালের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৪৫ হাজারেরে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের মৌসুমে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৫ হাজার। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ শরণার্থী গৃহহীন হয়েছে অথচ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ২০০। এই বছর জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  অন্যদিকে ২০১৮ সালে গোটা জুলাই মাসে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯ হাজার মানুষ।

ইত্তেফাক/নূহু