বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নেট দুনিয়ায় হেনস্তার শিকার নারীরা 

আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ০৮:৩৫

প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার ঘটছে। বিশেষ করে গত এক যুগে এ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে সারা দেশে। এর মাধ্যমে যেমন বেড়েছে যোগাযোগ, একইভাবে বেড়েছে অপরাধের সীমা। আর এ অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এ অপরাধের বড় মাধ্যম ফেসবুক। তৃণমূল থেকে জনপ্রিয় নারী তারকা সবাই বুলিংয়ের শিকার। তারকারা তো বটেই, সাধারণ নারী-শিশুরাও এই দুনিয়ায় বিপন্ন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্টের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮০ শতাংশ নারী ও তরুণী সাইবার বুলিংয়ের শিকার। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ শহরের তরুণী ও ৩৩ শতাংশ গ্রামের তরুণী অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের যৌন উদ্দেশ্যপূর্ণ ভিডিও, বার্তা ও ছবি পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক গবেষণা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হন, এর মধ্যে ৬২ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে এবং এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছাত্রী। এই একই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে ৭১ শতাংশ নারীই ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন বলছে, সাইবার বুলিংয়ের শতকরা প্রায় ৫২ শতাংশ অভিযোগই আসে নারীদের কাছ থেকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি মেয়েরা। শতাংশের হিসেবে তা প্রায় ৭৪। অভিযোগের একটি বড় অংশের অভিযোগ ফেসবুক সংক্রান্ত। এর মধ্যে আইডি হ্যাক থেকে শুরু করে সুপারইম্পোজ ছবি ও পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ অভিযোগও রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেক কিশোরী ও নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিকাশের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে এমনিতেই ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে সমাজে নারী ও তরুণীরা সাইবার দুনিয়ায় পিছিয়ে পড়ছে এখন ধারাবাহিক ও প্রতিনিয়ত সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কারণে তাদের আরেক ধাপ পিছিয়ে দেবে।

সাইবার বুলিং কী : ভাচু‌র্য়াল জগতে নানাবিধ হয়রানির নাম সাইবার বুলিং হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে উৎত্যক্ত করাকে বলে সাইবার বুলিং। আর এই উৎত্যক্ত করার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, খুদে বার্তা, গেমিং প্ল্যাটফরম বা মুঠোফোন। উৎত্যক্তকারীরা সাধারণত কোনো এক ব্যক্তিকে নিশানা করে ভয় দেখায়, রাগায় বা লজ্জা দেয়। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যাচার করা অথবা বিব্রতকর ছবি পাঠানো, ভিডিও পোস্ট করা; আঘাত পেতে পারে জেনেও কাউকে আক্রমণাত্মক কথা বলা বা ছবি দেওয়া, কারও পক্ষ হয়ে কাউকে বাজে কথা লিখে পাঠানো, অথবা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে আজেবাজে আধেয় পাঠানো সাইবার বুলিংয়ের আওতার মধ্যে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, সাইবার বুলিংয়ের কারণে নারীরা মানসিক পীড়ায় ভোগেন। অনেক সময় নারীরা আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। তবে আত্মহত্যা কোনো কিছুর সমাধান নয়। সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে নারীদের সচেতন করে তুলতে হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হবে। ছেলেমেয়েদের সেক্স এডুকেশন (যৌন বিষয়ে শিক্ষা) প্রয়োজন। এতে তারা বিপরীত জেন্ডারের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে শিখবে।

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন