আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রজেক্টের ফান্ডিং পাওয়া একটি প্রোফাইল স্টার্টআপ ছিল মেসবুক। ২০১৯ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। প্ল্যাটফর্মটি ব্যাচেলর ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরীজীবীদের মেস বা শেয়ার করে থাকা ফ্লাট ভাড়া দেওয়া-নেওয়া এবং ম্যানেজমেন্টের মতো কাজ সহজ করার লক্ষ্যে তৈরি। অর্থাৎ মেস লাইফের সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে এক জায়গায়— এই ধারণা নিয়েই মেসবুকের সূচনা। এর নেপথ্যে আছেন কয়েকজন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা হলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ সাজ্জাদ হোসেন, রাজিব রায়হান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদয় সাহা এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিম ইয়া জান্নাত।
গত ৬-৮ জুন দেশে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড। যেখানে মূল পর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০টি দল (স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে ৫০টি, প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে ১০টি) জায়গা করে নেয়। সর্বমোট ১৮০টি প্রজেক্ট সেখানে জমা পড়ে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) থেকে টিম মেসবুকও অংশ নেয় এতে। তারা উপস্থাপন করে, তাদের ‘রিয়েল ট্রাস্ট প্রজেক্ট’। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে মূলত ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কাজ করা যাবে।
প্রজেক্টগুলোর প্রদর্শনী হয় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের এক্সিবিশন হলে। এরপর যাচাই বাছাই শেষে ঘোষণা করা হয় বিজয়ীদের নাম। সেখানে ৩২টি দলকে পিছনে ফেলে শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়নের খেতাব পায় টিম মেসবুক।
মজার ব্যাপার হলো, শিরোপা নয়, কেবল অংশগ্রহণ করাটাকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের আসরে নাম লিখিয়েছিল মেসবুক। এর পেছনে কারণও আছে। প্রথমত, ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে এবার তাদের প্রথম যাত্রা ছিল। দ্বিতীয়ত, এখানে পারফরম্যান্স হিসেবে মূলত পিচিং কেমন হল সেটাই শুধু দেখা হয়। টিম মেসবুকের এ বিষয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। তাই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যখন তাদের নামটি ঘোষণা করা হয়, অবিশ্বাস্য এক ভালো লাগা কাজ করেছিল তাদের।
'আমাদের স্টার্টআপের জন্য অনেক পরিশ্রম করে পিচ রেডি, প্রাকটিস করলেও এই প্রতিযোগিতায় পিচিং এ কোন প্রিপারেশনই ছিল না আমাদের। কারণ সেভাবে সময় রাখা হয়নি আর পুরষ্কার পাওয়াও আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সবশেষে, আমরা আশা করেছিলাম ক্যাটাগরিভিত্তিক পুরস্কার হয়তো আমরা জিততে পারি, পরে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমাদের নাম শুনে আসলেই অবিশ্বাস্য লেগেছিল', বলছিলেন মেসবুকের টিম লিডার আহমেদ সাজ্জাদ হোসেন।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতির কথা জানিয়ে সাজ্জাদ ইত্তেফাককে বলেন, কোন কিছু জিততে পারা আসলে আনন্দের ব্যাপার। সেক্ষেত্রে ন্যাশনাল একটি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারটা বেশিই ভালো লাগার। কায়কোবাদ স্যারের মত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। আরো ভালো কিছু করার উৎসাহ পেয়েছি এই প্রতিযোগিতা থেকে।
মেসবুকের আরেক সদস্য রাজিব রায়হান বলেন, আমরা ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। আরও ভালো কিছু করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সকলের দোয়াপ্রার্থী।
প্রসঙ্গত, ব্লকচেইন হলো তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্যগুলো বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এতে তথ্য মালিকানা সংরক্ষিত থাকে। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করলে, কোনো একটি ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে, সেই চেইনে থাকা প্রতিটি ব্লকে পরিবর্তন করতে হবে, যা অসম্ভব।