শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গতিশীল নারীদের নিয়ে ওয়াও বাংলাদেশ!

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:৫৫

নারীর জীবনের সঙ্গে গাড়ির চাকার বেশ মিল আছে। জন্ম থেকে নারী কেবল গাড়ির চাকার মতো অন্যের প্রয়োজনে ছুটে চলে। গাড়ির কিংবা নিজের জীবনের স্টিয়ারিং ধরার সাহস নারীর সহসা হয়ে ওঠে না। আমাদের সমাজ মনে করে নারী চলার জন্য নিজের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। নারীও সমাজের ভয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখতে ভয় পায়।  কিন্তু এভাবে আর কত কাল? নারীর স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখার সাহস যোগাতে কাজ করছে ‘ওয়াও বাংলাদেশ’। এই ওয়াও (WOW)-এর পূর্ণ রূপ উইমেন অন হুইল।

ওয়াও বাংলাদেশ-এর ফাউন্ডার কাজী ফারহানা। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর অবস্থান দেখেই মূলত ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছে জাগে। তার এ প্রয়াসে সাহায্য করেন বাকি তিন বন্ধু—ফারহানা নাজমিন জ্যোতি, ফারজানা মাইশা ও সাইদা সায়না তুলন। তাদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় ‘ওয়াও বাংলাদেশ’র। উদ্দেশ্য, ট্রাফিক কন্ট্রোলের দিক থেকে এবং সরকারের পলিসির দিক থেকে মেয়েদের জন্য কি পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়ে কাজ করা। আর ওয়ার্কশপ ওনার,  ফুয়েল কোমপানি ও অটোমোবাইল রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে মেয়েদের সমতা এবং মেয়েদের জন্য কী ধরনের সাপোর্ট পাওয়া সম্ভব তা খুঁজে বের করা এবং কমিউনিটি বিল্ড-আপ করার চেষ্টা। মূলত এই তিনটি উদ্দেশ্য নিয়েই আপাতত এগোচ্ছে ‘ওয়াও বাংলাদেশ’। তবে তাদের স্বপ্ন—নিজেদের একটি ওয়ার্কশপ কিংবা ইমার্জেন্সি সার্ভিস তৈরি করা; যেখানে কোনো নারী ড্রাইভার যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়ে তাদেরকে একটি কল করলেই যেন তাদের সাপোর্ট সিস্টেম পৌঁছে যেতে পারে।  ‘ওয়াও বাংলাদেশ’র ফাউন্ডার কাজী ফারহানা বলেন, ‘মেয়েদের পেশা নির্বাচনে খুব কম সুযোগই থাকে। একজন কম পড়াশোনা জানা পুরুষ সহজেই ড্রাইভিংকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে। কিন্তু একজন মেয়েকে বেছে নিতে হয় গৃহকর্মীর কাজ। যদিও ড্রাইভিং তাদের জন্য সম্মানজনক পেশা হতে পারে। এক্ষেত্রে যে বৈষম্য আমাদের চোখে পড়ে  তা দূর করতেই কাজ করতে চায় ‘ওয়াও বাংলাদেশ’।

তাদের চার জনের হাত ধরে যাত্রা শুরু হলেও মাত্র কয়েক মাসে এর সঙ্গে প্রায় ৩৭০ জন নারী যুক্ত হয়েছে। কোনো মেয়ে যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, নিজের জন্য কিছু করতে চায় তখন সবচেয়ে আগে সমস্যার তালিকায় আসে ট্রান্সপোর্ট। আমাদের দেশে নারীরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একদমই নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে যদি নিজের গাড়ি, হোক সেটা প্রাইভেট কার কিংবা বাইক, স্কুটি নারী কিছুটা হলেও নিরাপদে নিজের কাজে যেতে পারে।

‘ওয়াও বাংলাদেশ’র কো-ফাউন্ডার সাইদা সায়না তুলন বলেন, ‘গাড়ি সমপর্কে সাধারণত মেয়েরা কম বোঝে। কারণ তাদেরকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণত কেউ সাহায্য করে না। এই গ্রুপ থেকে যেন তারা সাহায্য পায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।’

শুধু ড্রাইভিং স্কিল নিয়েই তাদের কাজ নয়। তাদের উদ্দেশ্য আরও বিস্তৃত। এ প্রসঙ্গে ‘ওয়াও বাংলাদেশ’র কো-ফাউন্ডার ফারজানা মাইশা বলেন, ‘নারীরা দেশ চালাতে পারলে গাড়ি কেন চালাতে পারবে না। আমরা আরও চাই বিভিন্ন সেক্টরে যে নারীরা কন্ট্রিবিউট করছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলতে এবং স্ট্রং একটা নারী কমিউনিটি বিল্ড-আপ করতে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ‘ওয়াও বাংলাদেশ’র কো-ফাউন্ডার ফারহানা নাজমিন জ্যোতি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব  এখানে যেন নারী  ট্রেইনাররাই নারীদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেন।’

ইত্তেফাক/এসটিএম