বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোববার (২৬ মার্চ) যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিটের নিরাবতা পালনসহ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বাণী পড়ে শোনানো হয়।
- সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশন
রোববার সকালে সিঙ্গাপুরের চ্যান্সারীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু করেন হাইকমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
একই সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে হাইকমিশনার প্রথমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজেদের সমবেত প্রচেষ্টায় বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের‘সোনার বাংলা’। হাইকমিশনার এই শুভদিনে সুখী-সমৃদ্ধশালী ও শান্তিকামী বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশি কমউনিটির সদস্যরা অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ওয়াশিংটন
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার নতুন শপথের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে রোববার (২৬ মার্চ) যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করা হয়েছে।
দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনাসভা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের মুক্তিকামী জনতা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ প্রতিক্ষীত স্বাধীনতা অর্জন করে।
সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে ডেপুটি চিফ অব মিশন ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, কাউন্সেলর (পাবলিক ডিপ্লোমেসি) আরিফা রহমান রুমা এবং কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত। ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ
জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে সবাইকে নিয়ে মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
মূল অনুষ্ঠানের আগে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানটিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
সুইডেন, স্টকহোম
সুইডেনের স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ২৬ মার্চ সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত মেহ্দী হাসান জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এর পূর্বে ২০ মার্চ বিকালে স্টকহোমের একটি স্বনামধন্য হোটেলে দিবসটি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত মেহ্দী হাসান এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিমন্ত্রিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। এ সময় আবহ সঙ্গীত হিসেবে বিভিন্ন দেশীয় গান বাজানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের রাষ্ট্রদূত মেহ্দী হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙ্গালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এ দেশের আপামর জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা, সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ নানা পেশার গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
- ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের উপর আলোচনা সভা, প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী, ও গেরিলা যুদ্ধ, প্রবাসী সরকার গঠন, বংগবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন, নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসন ও জন লিয়নের কনসার্ট সহ ৭১ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বংগবন্ধুর ছবি স্বম্বলিত সমাবেশের উপর স্লাইড শো দেখানো হয়।
আলোচনা সভার মূল আকর্ষন ছিল ততকালীন সময়ে ঢাকায় এসোসিয়েট প্রেসের সাংবাদিক হিসেবে উপস্হিত থাকা আমেরিকান সাংবাদিক আরনল্ড জেটলিনের বংগবন্ধুর সাথে তার কথাপকোথন, ভুট্রো ও বংগবন্ধুর বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক মন্তব্য, এ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির গতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিবেদনের উপর তার বিস্তারিত আলোচনা। দর্শক শ্রোতারা পিনপতন নিরবতায় সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সেই আলোচনা, পোষ্টার, চিত্র প্রদর্শনী উপভোগ করেন। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের দুই সন্তান দপ্মতি বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক গবেষকও ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. আদনান মোর্শেদ ও ড. সাদিয়া মোর্শেদ। যাদের পিতামাতারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং সংগঠক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ড. আদনান শিশুকালে নিজে প্রতক্ষ্য করা তার পিতামাতার উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বর্ননা দিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়েন বার বার।
আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনার উপর আলোকপাত করে স্মৃতিচারনমূলক আরও বক্তব্য রাখেন, আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, মুক্তিযুদ্ধ কালীন সংবাদ কর্মী ভয়েস অব আমেরিকায় কর্মরত বিশিষ্ট সাংবাদিক, সরকার কবির উদ্দীন, ও মাসুমা খাতুনসহ বর্তমান কালের আনিস আহমেদ, ইকবাল বাহার চৌধুরি ও বিশ্বব্যাংকে কর্মরত অর্থনীতিবীদ ড. কায়কোয়াসসহ আরও অনেকে। নতুন প্রজন্মের বেশ কজন তরুন তরুনীও আলোচনায় অংশগ্রহন করে। সবশেষে আইনজীবি কাজী ওয়াহিদুজ্জামান স্বপনের এখনও একাত্তর কবিতার আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। আলোক চিত্র প্রদর্শনীর শেষে আগত অতিথিগনকে ইফতার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ব্যাতিক্রম ধর্মী এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশি কমিউনিটির সচেতন, স্বাধীনতা সংস্কৃতি বিষয়ে কাজ করা মানুষজনের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
- জার্মানিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন
জার্মান আওয়ামী লীগের এন আর ভে শাখার উদ্যোগে ২৬ শে মার্চ, বাংলাদেশের ৫২ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, ইফতার এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার জার্মানীর কোলন শহরের একটি মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জার্মান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রদেশের নেতা কর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
এন আর ভে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর আলি আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জার্মান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোবারক আলী ভুঁইয়া, প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জার্মান আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি জনাব শাহাবুদ্দিন মোহাম্মাদ এবং প্রধান বক্তা ছিলেন এন আর ভে রাজ্যের বাংলাদেশের অনারারী কনসোল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া।
কোরান থেকে তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত এবং ২৫শে মার্চের কালো রাতে নিহতদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সুচনা হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব শাহাবুদ্দিন ২৫শে মার্চের সেই ভয়াল কালো রাতের স্মৃতিচারণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণই যে বাঙ্গালীর স্বাধীনতার সনদ তা তিনি সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।
একই সাথে তিনি বঙ্গবন্ধুর ২৫শে মার্চ রাতে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনাগুলো পড়ে শোনান। এসব ঘোষনা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ সকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। তিনি প্রবাসী নেতা কর্মীদের বর্তমান সময়ে দেশ বিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া প্রবাসী রাজনৈতিক কর্মীদের আরো বেশী দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি জার্মান আওয়ামীলীগের অতীত ইতিহাস তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সরকারের অনারারী কনসোল হিসেবে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসিদের বিভিন্ন ভুমিকার কথা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মোবারাক আলী ভুঁইয়া মহান স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য তুলে ধরার পাশাপাশি সকল নেতাকর্মীকে আগামী দিনের রাজনীতির জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। বাংলাদেশ সরকার এবং আওয়ামীলীগের সাফল্য গাঁথা প্রচারে নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আওভান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জার্মান সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবরা খান, ফিরোজ আহমদে, এনামুর রহমান, কেয়া মিয়া, তানিমা তাসনিম, বেলাল হোসেন, রাজু আহমেদ, জামাল খান, ফরিদ আহমেদ সহ আরো অনেকে।
- নাইজেরিয়ায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা-এ যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। রবিবার দিবসের প্রথমভাগে দূতাবাস প্রাঙ্গনে মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নাইজেরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদুর রহমান । এরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে শাহাদৎ বরণকারী সকল শহীদান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় । অতঃপর, বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের শাহাদৎবরণকারী সকল শহীদান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত ও দেশের অগ্রগতি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয় । মোনাজাত শেষে, রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় । মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী -এর বাণীসমূহ পাঠ করা হয় । বাণীপাঠের পরে, দিবসের উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হাইকমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ।
সন্ধ্যায় আবুজার কন্টিনেন্টাল হোটেলে নাইজেরিয়ায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্বিদ্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রবাসীদের জন্য স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে নাইজেরিয়ান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্রাচার প্রধান কাজাউওে রোগান চিরোমান উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও উল্লেখ্য, নাইজেরিয় জাতীয় চেম্বার অব কর্মাস (নাসিমা) -এর জাতীয় প্রেসিডেন্ট, আবুজা চেম্বারের প্রেসিডেন্টসহ আবুজাস্থ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে নাইজেরিয়ার সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ প্রধানদের পক্ষে উপ-প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও ফেডারেল ক্যাপিটাল টেরিটোরির পারমানেন্ট সেক্রেটারী ও সর্বোপরি নাইজেরিয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মীনি উপস্থিত ছিলেন ।
হাইকমিশনার মাসুদুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান । তিনি উল্লেখ করেন, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের জনমিতি, ঐতিহ্য, উপনিবেশিবাদী ইতিহাস, গণতন্ত্র, অসম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবোধ ভিত্তিক অনেক মিল রয়েছে । তিনি বাংলাদেশ-নাইজেরিয়ার বিদ্যমান পারস্পরিক দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন । হাইকমিশনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটাল, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
গেস্ট অব অনার নাইজেরিয়ান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রচার প্রধান। লিখিত বক্তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয় এবং বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর উল্লেখ করা হয়। তাঁর বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, এ দু‘দেশের বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারনের উদ্যোগ নিতে হবে । একই সাথে তিনি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারী উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর ও সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আন্তরিক পরিবেশে একযোগে দু‘দেশকে কাজ করার আহবান জানান । তিনি নাইজেরিয়ার জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ৫২তম স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন জানান।
উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে হাইকমিশনার ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে কেক কাটেন । অনুষ্ঠানে দেশ ও জনগণের অব্যাহত অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করা হয়।
- ম্যানিলা, ফিলিপাইন
নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে। একই সাথে বাংলাদেশ-ফিলিপাইন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দূতাবাস কর্তৃক বর্ষব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।
এ উপলক্ষে সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ম্যানিলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল ‘দুসিত থানি ম্যানিলা’-এর বলরুমে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র বিভাগের সেক্রেটারী (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এনরিকে মানালো। ফিলিপাইনের প্রধান বিচারপতি আলেকজান্ডার গেসমুন্ড, সিনেটর সিনিথয়া ভিলিয়ার, মাকাতি সিটি মেয়র মারলিন বিনায়, ক‚টনৈতিক কোর প্রধান চার্লস ব্রাউনসসহ অন্যান্য রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, ফিলিপিনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি বিভাগসমূহের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের অনারারি কনসালবৃন্দ, ফিলিপিনো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীসহ প্রায় তিনশত অতিথি এই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ফিলিপাইনের জনপ্রিয় একটি গানের দল। এরপর রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মা-বোনদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ফিলিপাইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে তিনি জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভে ফিলিপাইনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফারদিনান্দ মার্কোস সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে সেক্রেটারী মানালো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের সাথে ফিলিপাইনের দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে কৃষি, বাণিজ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিবিধ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেই সাথে তিনি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত বোরহান উদ্দিন সেক্রেটারী মানালো, প্রধান বিচারপতি গেসমুন্ড, সিনেটর ভিলিয়ার, কূটনীতিক কোর প্রধান চার্লস ব্রাউন এবং মাকাতি সিটি মেয়র বিনায়কে সাথে নিয়ে কেক কাটেন । অতঃপর এক জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এরপর এক জমকালো ফ্যাশন শো এর মাধ্যমে ফিলিপিনো ও বাংলাদেশি নারীরা বিভিন্ন শাড়ি আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন। জামদানি, মসলিন, তসর, কাতান, রাজশাহী সিল্কসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অ লের নানান ধরণের বর্ণিল শাড়ি সংগ্রহ ও এর প্রানবন্ত উপস্থাপনা সকল অতিথিদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
অভ্যর্থনা কক্ষের প্রবেশ পথে বাংলাদেশের কৃষি, গার্মেন্টস, পাট, চামড়াসহ অন্যান্য সম্ভাবনা খাতসহ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্থির চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের নেপথ্যে যন্ত্রসঙ্গীতের সাথে সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।