সময়টা তখন ডিজুসের। আকর্ষণীয় অফার। রাত এগারোটার পর কলরেট পঁচিশ পয়সা মিনিট। এমনই এক ডিজুস রাতে মেরিনার মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠল। ওপাশে যে কথা বলছে তার নাম সজল। যত দিন যায় ততই তাদের মাঝরাতের প্যাঁচাল চলতে থাকে তীব্র নেশায়। দুজন অপেক্ষায় থাকে কখন রাত এগারোটা বাজবে। কিছুদিনের মধ্যে তাদের ডিজুস প্রেম মন থেকে ছড়িয়ে পড়ল শরীরে। সজলের বহুগামী ভাব প্রবল। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই মেরিনার প্রতি তার টান কমতে শুরু করল। বহু চেষ্টা করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখল মেরিনা। অবশেষে বন্ধুরা সজলকে অনেক বুঝিয়ে মেরিনাকে বিয়ে করতে রাজি করাল।
কাঙ্ক্ষিত বিয়ের দিন এলো। দুজনের দীর্ঘ দিন দেখা হয় না। অস্থির হয়ে আছে তারা। বিয়ের সানাই বাজছে। প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে বিয়েবাড়িতে, গেট তৈরি হয়েছে পুকুরপারে। ফিতে দিয়ে গেট আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা। বর চকচকে একশো টাকার বান্ডিল নারীদের হাতে গুঁজে দিয়ে ফিতা কেটে ভেতরে প্রবেশ করল। আকাশে তখন আতশবাজির আতিশয্য। রাস্তার দুপাশ থেকে শ্যালিকাদের ছুড়ে দেওয়া গাঁদাফুলের পাপড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো সজলের মাথায় এসে পড়ছে। বেনারসি পরে বধূ সাজে বসেছিল মেরিনা। বর এসেছে শুনে উঠানে এসে দাঁড়াল। দূর থেকে সজলকে একপলক দেখে সে দিশেহারা হয়ে গেল। স্থান-কাল-পাত্র সব ভুলে গিয়ে সে এক দৌড়ে সজলকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। দুজন দুজনকে জড়িয়ে রাখল বেশ কিছুক্ষণ।
দুই পরিবারের মুরব্বিরা দুজনকে ঘিরে দাঁড়াল। তারা বিব্রত, হতবাক! কেউ বলছেন—নাউজুবিল্লাহ! মানুষের শরম লজ্জা গেল কোথায়? কেউ বলছে—কলি কাল আইসা গেছে!
দুজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সজলের বাবা তার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে, গাড়িতে উঠে বসলেন। তিনি চিত্কার করে বলতে লাগলেন—এই মাইয়া মোল্যা বাড়ির বউ হইতে পারে না! কখনো না!
মেরিনার বাবা-চাচারা বহু চেষ্টা করে তাদের আর বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পারল না। মেরিনা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ল। বিয়েবাড়ির গতি কমে এলো। ঠিক এমন সময় মেরিনার মুঠোফোনের ডিজুস নম্বরটি অনবরত বাজতে লাগল—বিকট শব্দে।
[ঢাকা]