বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

চাপিলা মাছ ও রাসেল মিয়া

আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৯:০১

পুরো বাজার ঘুরেও মাছ কেনা হলো না রাসেল মিয়ার, অনেক দাম। এদিকে স্ত্রীকে সে বলে এসেছে দুপুরে দুটো চাল যেন বেশি করে রাঁধে। তার আজ ছুটির দিন, পরিবারের সঙ্গে খাবে । মাছ কিনতে না পারায় সেটা আজ আর হচ্ছে না তাহলে! 
এমন সময় স্ত্রীর ফোন। কইগো? মাছ আনতে আর কতক্ষণ? রাসেলের মেজাজ টানটান করে রাগে। মাছ কিনতে না পারার রাগ। ফোন রেখে সে মনে মনে স্ত্রীকে গালি দেয়। বেত্তমিজ মহিলা, জীবনটারে ত্যাক্ত করে ফেলছে এক্কেবারে। সে কি জানে না স্বামীর অবস্থাটা! এত খাই খাই করলে হয়! অবশ্য তারই বা দোষ কী! স্ত্রীর পেটে থাকা প্রথম সন্তান মারা গেল। এরপর স্ত্রীর পেটে কী যেন অসুখ ধরা পড়লো। তার চিকিৎসাটাও করাতে পারেনি রাসেল। তার কোনো শখ-আহলাদও পূরণ করা হয়ে ওঠে না। 
বৃষ্টি শুরু হলো। 
বাজার থেকে বের হতে গিয়ে রাসেলের চোখ পড়লো চাপিলা মাছের দিকে। 
জিহ্বায় পানি এসে গেল যেন। 
এমন বৃষ্টির দিনে আস্ত আস্ত কাঁচা মরিচ দিয়ে তেল বাড়িয়ে চাপিলা মাছের ঝোল দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত খেলে মন্দ হতো না। স্ত্রীকে ফোন করে বলল, চাল ধইরা রান্দিস কিন্তু সকালেই কইছিলাম। মাছ আনতাছি। 
রাসেল মাছের দরদাম করে। মাছ কিছুটা নরম হয়েছে। তাতে সমস্যা নেই। দামও কম। বেশি করে পেঁয়াজ  দিয়ে রান্না করলে স্বাদ বরং বাড়বে। 
রাসেল আধাকেজি চাপিলা মাছ দিতে বলে দোকানিকে। ঠিক তখনই তাকে ধাক্কা দিয়ে এক নারী এসে হাজির। দোকানিকে উদ্দেশ্য করে বলল, চাপিলা যা আছে ব্যাগে ভরেন। 
দোকানি রাসেলকে দিতে যাওয়া মাছগুলো গামলা থেকে নামিয়ে ফেলল। সব এক ব্যাগে ভরে সে নারীকে দিতে দিতে বলল, ভাইজান আপনারে দিতে পারলাম না। আসলে হইছে কী, পুরো মাছ একসাথে না বেচলে আমার লস হইব। তাছাড়া এই আপায় আমার বান্দা কাস্টোমার। 
রাসেল সেই মাছ ক্রেতা নারীর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, আপার কি সব মাছই লাগবো? 
নারীটা 'হুম' বলেই মাছগুলো নিয়ে চলে গেল হন হন করে। 
রাসেল মনে মনে গালি দেয়- রাক্ষোস বেডি। 
আসার সময় রাসেল দোকানিকে জিজ্ঞাসা করে, উনি এত মাছ কী করবেন? 
দোকানি হাসতে হাসতে বলল, আরে উনার পোষা বিলাই (বিড়াল) আছে তিনখান। মাছগুলো উনি বিলাইরে খাওয়াবেন। খুব আদরের তো!
রাসেল আর এক  মুহূর্ত দাঁড়াতে পারে না। মাছ বিক্রেতার হাসি তার শরীরে কাঁটার মতো ঢুকছে। মানুষের হাসি এত বিশ্রি হয়!
রাসেল বাজার থেকে বের হয়ে আসে। তার বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলল, আজ দুপুরে বাসায় আইতে পারমু না। তোরা খাইয়া লইস। স্ত্রী চিল্লিয়ে উঠে। কও কী! তুমি না মাছ আনতে গেলা! রাসেল ফোন রেখে দেয়। তার স্ত্রীর জন্য খুব মায়া লাগছে। চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তার অজান্তেই। 
বাইরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাসেল রাস্তায় একপাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো। তার চোখে ভাসছে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত। কাঁচা মরিচ দিয়ে রাঁধা চাপিলা মাছ।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন