অনেক দিন আগে সাগরপাড়ের একটি গুহায় এক জোড়া মস্ত বড় ড্রাগন বাস করত। ড্রাগনদের কোনো বাচ্চা-কাচ্চা ছিল না, তাই একটা সন্তানের জন্য তারা সব সময় ঈশ্বরের কাছে কাকুতি-মিনতি করত। একদিন ড্রাগনের গুহার কাছে একটা ছোট নৌকা এসে থামে। পুরুষ ড্রাগনটি খেয়াল করে নৌকার ভেতর বাবা-মায়ের কোলে একটা ফুটফুটে সুন্দর কন্যা শিশু। ড্রাগনটি তার স্ত্রীকে জানাল, এই শিশুটিকে তাদের চাই।
তারপর পুরুষ ড্রাগনটি শিশুটির বাবা-মাকে আক্রমণ করে একেবারে মেরেই ফেলল। ছোট্ট শিশুটি সেই শেষবারের মতো তার বাবা-মাকে দেখেছিল। এরপর ড্রাগনরা শিশুটিকে নিয়ে এল তাদের গুহায়।
দিনের পর দিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে ড্রাগনের গুহায় সেই ছোট্ট মেয়েটি বড় হলো। মেয়েটি ড্রাগনকেই তার বাবা-মা মনে করত।
একদিন ড্রাগনরা যখন খাবার খুঁজতে বাইরে গেল, মেয়েটি তখন গুহার ভেতর থেকে বের হয়ে এল। বাইরের পৃথিবী দেখে সে অবাক হয়ে গেল। আহ! কী সুন্দর চারদিক! মেয়েটি ভাবল, তার বাবা-মা ফেরার আগ পর্যন্ত সে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখবে।
সমুদ্রপাড়ের মুক্ত বাতাসে মেয়েটি একা একা হাঁটছে, কী অপরূপ ঢেউ, সুবিশাল আকাশ! হঠাৎ সে খেয়াল করল, দূরে তার মতোই দেখতে কিছু প্রাণী। সে মনে মনে ভাবল—‘ওরা কারা? কেনই বা দেখতে একেবারে আমার মতো, আর আমি কেন আমার বাবা-মার মতো নই? তাহলে কি ড্রাগনরা আমার সত্যিকারের বাবা-মা নয়?’ অনেক চিন্তা-ভাবনা শেষে মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিল, সে আর ড্রাগনের গুহায় ফিরে যাবে না। তারপর সে গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করল, যেখানে তারই মতো দেখতে আরো অসংখ্য মানুষ ছিল। তাদের সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই তার ভাব জমে গেল।
এদিকে ড্রাগনরা গুহায় ফিরে আসলো। গুহার ভেতর তাদের পালক কন্যাকে না দেখে তারা উন্মাদ হয়ে গেল। ‘কোথায় আমাদের মেয়ে? কোথায়?’ তারা চিত্কার করে মেয়েকে খুঁজতে বের হলো। গ্রামবাসীকে লক্ষ করে ড্রাগনরা হুঙ্কার দিলো—তাদের মেয়েকে খুঁজে না পেলে তারা গ্রামের সব মানুষকে খেয়ে ফেলবে। ড্রাগনের হুমকিতে গ্রামবাসী ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তারা দৌড়ে চলে এল এক ধ্যানমগ্ন ঋষির কাছে। ঋষির কাছে প্রার্থনা করল—ড্রাগনের হাত থেকে তিনি যেন গ্রামবাসীকে বাঁচান।
ঋষি তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন। ড্রাগনের মুখোমুখি হলেন। সেই ঋষির ছিল প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক ক্ষমতা। ড্রাগনের সাথে তাঁর বেধে গেল তুমুল যুদ্ধ। গ্রামবাসী দূর থেকে দাঁড়িয়ে সেই যুদ্ধ দেখল। অবশেষে ঋষির কাছে ড্রাগন পরাজিত হলো। যে সুড়ঙ্গের ভেতরে ড্রাগনের সাথে ঋষির যুদ্ধ হয়েছিল, সেটি আজো ড্রাগন সুড়ঙ্গ নামে পরিচিত। সেখানে এখনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতাধর সেই ঋষির বিশাল পায়ের ছাপ পড়ে আছে।
[*তাপাক তুয়ান = ঋষির পায়ের ছাপ]
অনুবাদ ও ডাকটিকিট সংগ্রহ: নিজাম বিশ্বাস