শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অগ্নিঝরা মার্চ

সত্তরের নির্বাচন না হলে স্বাধীনতা আসত না

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২১, ০৭:৫৪

২রা মার্চ, ৩রা মার্চ, ৭ই মার্চ, ২৩শে মার্চ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে, হবেও। 


ছাত্রলীগের একটি অংশ সত্তরে বলতেন, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘নির্বাচনের কথা বলে যারা, সিআইএর দালাল তারা’; পক্ষান্তরে আমরা ছাত্রলীগের একটি অংশ ছিলাম, যারা ছিলাম সংখ্যালঘিষ্ঠ। আমরা বলতাম নির্বাচনে আমাদেরকে অংশ নিতেই হবে; কেননা, আমাদের তখন একটা ম্যান্ডেট দরকার, আমরা বলতাম, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটা নির্বাচন দরকার।

আমরা আরো বলতাম, যারা আমাদের ভাষা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের মননশীলতা, আমাদের মানসিকতা, আমাদের দেশ, আমাদের মাটিকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসে না, বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি দেয় না, মাকে মা বলে ডাকার জন্য যাদের কাছে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যান্ডেট দরকার। আমরা জানতাম, নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, তারা এই নির্বাচনের রায় মেনে নেবে না। তবু নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল।

’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯৮ ভাগ মানুষ যদি বুক উজাড় করে তাদের সমর্থন না দিত, যদি তাদের বুকনিঃসৃত বিশ্বাসকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্পণ না করত, ৭ই মার্চে যে ভাষণে সমস্ত বাংলার মানুষকে একটি মিলনের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিলেন ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো’—এই কথাটি বলার এক্তিয়ারও তার আসত না, তার অধিকারও আসত না। 
’৭০-এর নির্বাচন যদি না হতো, তার আগে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান যদি না হতো, তারও আগে যদি ৬ দফা সন্নিবেশিত না হতো এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সারা বাংলাদেশের মানুষের উদ্বেলিত হূদয়ের সমর্থন না ঘটত, তাহলে ১লা মার্চ, ২রা মার্চ, ৩রা মার্চ, ৭ই মার্চ, ২৩শে মার্চ এবং স্বাধীনতা আসত না।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা আন্দোলনের বটবৃক্ষ আমরা তার শিকড়। আমি সব সময় বলি, বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার আকাশে প্রদীপ্ত সূর্য হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাকে লালন করা দিগন্তবিস্তৃত আকাশ। বঙ্গবন্ধু যদি সমুদ্র হন, তাহলে তার বুকে উচ্ছ্বসিত ঊর্মিমালা হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমরা সেদিন সঠিক ধারায় ছিলাম বলেই, নির্বাচনের ধারায় ছিলাম বলেই, মানুষের ম্যান্ডেট নিতে পেরেছিলাম বলেই স্বাধীনতার আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদের আন্দোলনে পরিণত হয় নাই, তার সঠিক নির্দেশনার পথে সাফল্যের সৈকতে পৌঁছে গিয়েছিল।

আমি বিনীতভাবে বলতে চাই, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৃজনশীল সৃষ্টি। তার আদর্শকে বক্ষে লালন করি। সমস্ত অপবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে আমরা সারা বাংলাদেশকেই উজ্জীবিত করব। বাঙালি জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং ছাত্রলীগ একটি অভিন্ন সত্তা। একটি আরেকটির পরিপূরক শক্তি। বাংলাদেশের জাতির জনক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, দ্বিতীয় কথা হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, তৃতীয় কথা হলো স্বাধীনতার মূল চেতনা, চতুর্থ কথা হলো মুক্ত অর্থনীতির ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক বিকাশ তথা সামাজিক ন্যায়বিচার—এটিই ছিল আমাদের মূল আদর্শের পথ।

লেখক :স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা


ইত্তেফাক/এনএ