শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিশুর মানসিক বিকাশ

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:৪৭

সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি শিশু তার জীবন অতিবাহিত করলেও পরিবার হলো সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রধান ভিত্তি। আমরা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করলেও সামাজিক নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ পরিবার থেকে অর্জন করে থাকি। 

এছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বন্ধন দৃঢ় করে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভালো-মন্দ বিচার করার বোধশক্তি জাগ্রত হতে থাকে। তাই শিশু বেড়ে ওঠার সময় আমাদের সঠিক ও শিক্ষামূলক ব্যবহার করতে হবে, যাতে শিশুরা যথাযথভাবে সামাজিক বোধশক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতাই পারে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটাতে।

বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় শিশু-অপরাধমূলক কার্যসিদ্ধি হচ্ছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ও মোবাইল ফোনে অত্যধিক আসক্ত হয়ে শিশু ও কিশোর অনলাইনে অশ্লীলতা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং, যা কিশোরদের দ্বারা বিভিন্ন অপরাধমূলক অসামাজিক কাজ দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শিশুর প্রাপ্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাবা-মাকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

আরও পড়ুন: করোনায় শিশুদের সুরক্ষা

পরিবারের সতর্কতার অভাবে অনেক সময় শিশু বা কিশোর অসামাজিক ও বিচ্যুতিমূলক আচরণ করে থাকে। আবার পরিবারের সদস্যরা যেভাবে শিশুদের সঙ্গে ব্যবহার করবে ঠিক যেভাবে সেই আচরণে বেড়ে উঠবে। তাই বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক সহনশীল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অনেক শিশু প্রতিবন্ধিতার কারণে নিজেকে গুটিয়ে নেয় অন্যদের থেকে এবং নিজেকে অসহায় বা নিচু দৃষ্টিতে নিজের প্রতি বিচার করতে থাকে। আমাদের এসব প্রতিবন্ধী শিশুকে বিশেষ নজরে রাখতে হবে। শিশুর মানসিক বিকাশ যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে প্রত্যেক পরিবারকে সর্বাধিক সতর্ক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। কেননা আজকের শিশু আগামী দিনে দেশের মানবশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়ায় সাধারণত পিছিয়ে পড়া এলাকা জুড়ে অনেক শিশুর সঠিক পরিচর্যা হয় না। প্রান্তিক এলাকার তুলনায় শহরের সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে। এছাড়া শহরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং শহরের শিশু-কিশোররা সঠিক গাইডলাইন ও উপযুক্ত প্রযুক্তির আলো পাওয়ায় গ্রাম বা প্রান্তিক এলাকার শিশুদের চেয়ে বেশি অগ্রসর। তারা সরকারের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়াও ইংলিশ মিডিয়াম ও অন্যান্য মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সাধারণত গ্রামে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষামাধ্যম নেই। তাই এমন বৈষম্য দূর করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের গিয়ে আসতে হবে। এছাড়া গ্রামে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সামাজিক নৈতিকতা ও মূল্যবোধ অর্জন করে থাকে। তবে বর্তমানে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হ্রাস পাচ্ছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চপর্যায়ের মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে।

আরও পড়ুন: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ দৃঢ় থাকায় এই উপমহাদেশ জম্ম দিয়েছিল মহামানবদের তথা রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ। বিদ্যাসাগরের পায়ের চটি হতে মহাত্মা গান্ধীর গায়ের চাদর পর্যন্ত কীভাবে পরিধান করতেন—তত্কালীন ছাত্রসমাজ তা অনুসরণ করতেন। বইপড়া, প্রবন্ধ লেখা, কবিতা পাঠ, দেশপ্রেম, সুষ্ঠুধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ইত্যাদি বিষয়ে তত্কালীন শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বন্ধন ছিল অটুট। 

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তত্কালীন মহামানবদের আদর্শ অনুসরণ না করে বিভিন্ন মডেলদের বিভিন্ন স্টাইল ও মার্কিনি ইয়ার্কি ফ্যাশন শো অনুসরণ করে থাকে। এ থেকে আজকের ছাত্র-সমাজ মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। জন্ম নিচ্ছে না মহামানব ও মহাজ্ঞানী। তাই নতুন প্রজন্মকে সঠিক ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী প্রজন্ম যেন নৈতিকতা মূল্যবোধ চর্চার মধ্যদিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় হয়।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন