সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উদাসীনতায় সড়কে নক্ষত্রপতন 

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৩

আজ আমরা কিসে মত্ত? কোন স্বপ্ন লালন করি আমরা? কিসের পেছনে এত ছোটাছুটি? সে স্বপ্ন তো প্রতিনিয়ত বাসের চাপায় পিষ্ট। আমরা এমন একটি দিনও কাটাতে পারি না, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাওয়া একটি নাম যুক্ত হয় না আমাদের স্মৃতির পাতায়। আজ আমরা কোন সুভাসে নিজেকে সুরভিত করি? আমাদের চারিপাশে তো শুধুই মরে যাওয়া স্বপ্নের দুর্গন্ধ! এ কোথায় আমার বাস? যেথায় স্বপ্ন মরার গল্প রটে দিনরাত! রাস্তায় কাটানোর প্রতিটি মুহূর্ত কাটে বাড়ি না ফেরার অনিশ্চয়তায়। আমি হারিয়ে ফেলি নিজের স্বপ্নকে, মরে যাওয়া হাজারো স্বপ্নের ইচ্ছা পূরণে। প্রভাতের রক্তিম সূর্য মাকে আর আনন্দ দেয় না, দেয় সম্ভাব্য নতুন মৃত্যুর খবরের যন্ত্রণা। উদাসীনতার কারণে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হওয়া পরবর্তী নামটি তার সন্তানের নয়তো! শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে স্কুলে পাঠানো তার সন্তানটি লাশ হয়ে ফিরবে না তো!

বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। রাজপথে আজ শুধুই শিক্ষার্থীদের লাশের ভিড়। প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয় নতুন নতুন নাম। শ্যামল বাংলার ঋতুর আগমনী বার্তায় গান নয়, ভেসে বেড়ায় রাজীব, দুর্জয়, হিমেলের আহাজারি! এমন বাংলা তো চাইনি কখনো! শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ আফসোস! আমার দেশের ভবিষ্যত্ আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সড়ক দুর্ঘটনার বলি হয়ে অকালে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো নাইম আর হিমেলেরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ট্রাক চাপায় ছাত্রের মৃত্যু। অথচ এক বুক স্বপ্ন নিয়ে শত বাধাকে তুচ্ছ করে হিমেল একটি সুন্দর জীবনের জন্য গিয়েছিল ক্যাম্পাসে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে হিমেল চাকরির সুখবর নিয়ে একগাল হাসিমাখা মুখে আবার নিজ আঙিনায় ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। এভাবে প্রিয়জন হারানোর বেদনা আর হাহাকার যেন বিবর্ণ করে দেয় সোনার বাংলার সব অর্জনকে।

আন্দোলন হলে হয়তোবা দাবি পাশ হয়, কিন্তু তা প্রয়োগে খুঁজে পাওয়া যায় শুধুই উদাসীনতা। হাফ পাশের অধিকার আদায়ে নামতে হলো রাস্তায়, সেখানে আবার হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা। কেন এত অবহেলা? নিরাপত্তা তো আমার অধিকার! তবু কেন উদাসীনতার কাছে বারবার হেরে যায় এমন সম্ভাবনাময় নক্ষত্রগুলো? এর জন্য দায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক, রাস্তায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা, আইনের শিথিল প্রয়োগ ও অসচেতনতা। চাইলেই আমরা এগুলোর সমাধান করতে পারি, আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে এবং আইনের প্রয়োগ করে। কিন্তু কই ? আমাদের দেশে অধিকাংশ গাড়ি ফিটনেসবিহীন, অধিকাংশ চালক লাইসেন্সবিহীন, নেশাগ্রস্ত, কিন্তু এটা যেন ভাবার কোনো বিষয়ই নয়। তাহলে তাদের থেকে এর চেয়ে ভালো আমরা কি আশা করি? এত আর্তনাদ, মৃত স্বপ্নের এত আহাজারিও যেন ছুঁতে পারছে না আমাদের বিবেক। আনতে পারছে না সচেতনতার বলয়ে। আজ আমি বড়ই অসহায়। বেঁচে থেকেও যেন হারিয়ে গেছি অকালে হারিয়ে যাওয়ার অনিশ্চয়তায়। এমন একটি দিনের অপেক্ষায় যখন আর সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাওয়া কোনো ভাই কিংবা প্রিয়জনকে দেখতে হবে না সংবাদ শিরোনামে। শুনতে হবে না কোনো অকালে হারিয়ে যাওয়া যত্নে লালিত স্বপ্নের গল্প।

হ লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/ আরাফাত

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন