সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অবহেলায় ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ওমিক্রন 

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৩

গত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুহার বিবেচনায় সারা দেশে, বিশেষ করে রাজধানীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাবধানতা কিংবা সচেতনতার ন্যূনতম ছাপ নেই। দীর্ঘ সময় পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও খুবই সামান্য সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর স্বার্থে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে সময়সীমা হয়তো পূর্বের মতোই বাড়তে থাকবে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে, অন্যান্য সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চললে দিনশেষে ঠিক কতটুকু দায়বদ্ধতা এড়ানো সম্ভব, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।

বিভিন্ন দেশে যেভাবে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে; তাতে বিশ্ব গত সময়ের চেয়েও সামনে আরো বেশি ভয়ানক পরিস্থিতি দেখবে বলেই মনে হয়। হাট-বাজার, ছোটখাটো মার্কেট থেকে শুরু করে শপিং মলসহ প্রায় সব স্থানেই জনগণের উপস্থিতিতে মনে হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ বিন্দুমাত্রও বিচলিত নয়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে লোকসমাগম বাড়ার প্রতিচ্ছবি দেখলে মনে হয়, যেন কিছুই হয়নি পৃথিবীতে! সংক্রমণ বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনাক্তের হার বিবেচনা করলে এই মুহূর্তের চেয়ে আগামী পনেরো দিনের মাথায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার যে বেড়ে রেকর্ড গড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

রাজধানীতে ওমিক্রনে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা অতিরিক্ত হারে বাড়ছে; এমন পরিস্থিতিতেও রাজধানীতে গণপরিবহনের চিত্র সত্যিই ভয়ানক সংকটের আভাস দেয়। কঠোর বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি হলেও তা কার্যকরের বালাই নেই। বাসে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা, মাস্কবিহীন অহেতুক ঘোরাফেরা করা, রেস্টুরেন্ট খাবার দোকানগুলোসহ সব স্থানেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পূর্বের তূলনায় এবার প্রশাসনকেও তেমন কঠোর অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না কেন, তার উত্তর ধোঁয়াশার মতোই। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোর সামনে রাখা জীবাণুনাশক যন্ত্রগুলোও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন ঘোষণা দিয়ে বিদায় নিয়েছে কোভিড-১৯। অথচ সমস্ত যন্ত্রাংশগুলো কার্যকর থাকার কথা ছিল। কোভিড-১৯ শনাক্তের প্রথম দিকে একইভাবে গুরুত্বহীন আচরণ পরবর্তী সময়ে কিছুটা হলেও বাড়তি সমস্যার জন্য দায়ী ছিল। নতুন করে ওমিক্রনের এই প্রভাব বিস্তারের পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রশাসনসহ জনগণের এমন অবহেলার দৃষ্টিভঙ্গি বোকামিরই সামিল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, নতুন এই ধরন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো সমাধানও দিতে পারছে না, তার ওপর স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এমন-প্রেক্ষাপটে সবার সাবধানতা অবলম্বনের কথা থাকলেও কারো যেন টনকই নড়ছে না। অন্যদিকে কেউ টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করলেও যে সে আবার সংক্রমণের শিকার হবে না, তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’, অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা নয়, প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অনেক আগে। মাঝে কিছুদিন তার বাস্তবায়নও ছিল জোরালোভাবেই। কিন্তু হঠাত্ করে মাস্কের ব্যবহার উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। এমনিতেও ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষস্হানে রয়েছে। সেই বিবেচনা থেকেও বায়ুবাহিত নানান রোগ এড়িয়ে চলতে মাস্কের বিকল্প নেই। তার ওপর ওমিক্রনের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতেই হবে। এ কথা সত্য যে, দেশের সব কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হলে অর্থনৈতিক কাঠামোতে আমরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়ব। গত দেড় বছরে বাংলাদেশ অবশ্য সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত বছরে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে লক্ষমাত্রার চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি। গত ৫০ বছরের ইতিহাসে গেল বছরের ডিসেম্বরে শুধু একক মাসে ৪৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে অর্থনৈতিক কাঠামোতে উন্নয়নের বিকল্প নেই। তবে নিজের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। সেই অর্থে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে না চললে পূর্বের মতোই আমাদেরকে আবার ঘরবন্দি হতে হবে।

ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। নিজের জায়গা থেকে সচেতন হলে পৃথিবীটা আরো বেশি সহজ হয়ে যেতে পারে। অতএব অবহেলার ফলে সৃষ্ট সংকটের পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে, এমন অবহেলার ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চয়ই সুখকর হবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন